সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক সংকটের কারণে গত অক্টোবরে মামলা নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চ কমিয়ে একটি করা হয়। তখন থেকেই বিচার-সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, দ্রুতই বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে ফের স্বাভাবিক হবে আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম।
প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের অনেকেই বিচারক নিয়োগের বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে তাগিদ দিয়েছেন। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার অবসরে গেছেন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন।
গত ১৪ মাসে তাঁকে নিয়ে চারজন বিচারপতি অবসরে গেছেন। এই সময়ে আর কেউ নিয়োগ পাননি। আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গত কয়েক মাসে মামলাজটও বেড়েছে কয়েক হাজার।
২০০৯ সালে আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি দায়িত্বরত ছিলেন। বর্তমানে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচজন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন নিয়োগ না হওয়ায় পিলখানা বিডিআর হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর অনেক মামলার বিচার কার্যত থমকে আছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, আপিল বিভাগে ২১ হাজার ১৮৪টি মামলা বিচারাধীন। যার সংখ্যা এখন ২২ হাজার ছাড়িয়েছে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে আপিল বিভাগে যে সংখ্যক মামলা রয়েছে, তা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হলে আপিল বিভাগে দ্রুত বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। তিনটি বেঞ্চে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হলে মামলাজট কমাতে সহায়ক হবে।
সংবিধানে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ ও প্রয়োজন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আপিল বিভাগে সাতজন বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। সেদিন পর্যন্ত আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে নিয়মিত বিচারকাজ পরিচালিত হতো। একটি বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং দ্বিতীয় বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) ওবায়দুল হাসান।
এর পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। পরদিন শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। অবকাশ (ছুটি) শেষে ৮ অক্টোবর থেকে আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চে নিয়মিত বিচারকাজ শুরু হয়। বিচারকের স্বল্পতায় বেঞ্চের সংখ্যা তখন থেকেই একটি।
রীতি অনুযায়ী, হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের মামলাগুলো আপিল বিভাগে আরও বেশি সংখ্যক বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে নিষ্পত্তি করা হয়। এ ছাড়া আপিল বিভাগে রায় রিভিউর আবেদনগুলো সমসংখ্যক বিচারপতিরা নিষ্পত্তি করে থাকেন। কখনও কখনও রায় বা আদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। হাইকোর্টে কিছু মামলা তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
বিচারক স্বল্পতায় পিলখানা বিডিআর হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু মামলার বিচার থমকে আছে। এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, পিলখানা হত্যা মামলা সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত শুনানি করতে আপিল বিভাগে আলাদা বেঞ্চ গঠন করতে হবে। আশা করছি, অচিরেই আপিল বিভাগে নতুন বিচারক নিয়োগ হবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আপিল বিভাগের একাধিক বেঞ্চ থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন সময়ে প্রধান বিচারপতি উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের বিষয়ে কথা বলেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, আপিল বিভাগের যে পরিমাণ মামলা বিচারাধীন, তাতে দুটি নয়, তিনটি বেঞ্চে বিচারকাজ হওয়া উচিত। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ না নিলে সমস্যার সমাধান হবে না। এখন অন্তত চার-পাঁচ বিচারক নিয়োগ প্রয়োজন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আপিল বিভাগে কতজন বিচারপতি থাকবেন, সংবিধানে এমন কোনো বিধান নেই। খুব শিগগির রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নেবেন।