জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪’ পাচ্ছেন দেশবরেণ্য আইনজীবী এসএম আব্রাহাম লিংকন। সমাজ বা জনসেবা শ্রেণিতে তাঁকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার (১৫ মার্চ) এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী এবারে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হচ্ছেন—স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে কাজী আব্দুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আবু নঈম মো. নজিব উদ্দীন খাঁন (খুররম) (মরণোত্তর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. মোবারক আহমদ খান, চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ, সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুন, সমাজ বা জনসেবায় অরন্য চিরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী ও অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন।
উল্লেখ্য এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ১৯৭৭ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর স্বাধীনতা পুরস্কার দিচ্ছে সরকার। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: একুশে পদক ও প্রাপ্ত অর্থ উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে দিলেন আইনজীবী লিংকন
এর আগে সামাজসেবায় অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকনকে একুশে পদকে ভূষিত করে। কুড়িগ্রামের এই আইনজীবী ও সমাজকর্মী নিজ বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস-ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা হিসেবে ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আলোচিত ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত আইনি পরামর্শক ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
এস এম আব্রাহাম লিংকন ১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর বকসীপাড়া গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তারা বাবার নাম মহিউদ্দিন আহমদ এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। বাবা মহিউদ্দিন আহমদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। এই দম্পতির সাত ছেলের মধ্যে পঞ্চম হচ্ছেন আব্রাহাম লিংকন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলবি এবং এলএলএম পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন ১৯৮৮ সালে রাকসুর সহকারী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এছাড়াও আব্রাহাম লিংকন ফিলিপাইন থেকে গ্রামীণ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন এর উপর ডিপ্লোমা শেষ করেন।
১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর থেকে কুড়িগ্রামে আইনজীবী হিসেবে শুরু করেন তার কর্মজীবন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবেও তালিকাভুক্ত আছেন। ১৯৯২ সালে তিনি কুড়িগ্রাম আইন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৭ সাল থেকে আব্রাহাম লিংকন কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত আছেন।
আব্রাহাম লিংকন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সহসাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলায় বাংলাদেশের পক্ষের আইনজীবী তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬১টি ছিটমহল বিনিময়ে স্থানীয়ভাবে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টাও ছিলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ বর্ডার ভিকটিমস রেসকিউ লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স ফোরামের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য অবদান রাখা বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির পুনর্বাসনে সহায়তা করেন এস এম আব্রাহাম লিংকন। ২০১২ সালে আব্রাহাম লিংকন কুড়িগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রহশালা ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেছেন।