কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের বিরুদ্ধে আড়াই কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর কুমিল্লা বারে এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। সম্পাদকের আবু তাহেরের সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে গত রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে সাধারণ আইনজীবীরা। পরে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তার কক্ষে তালা মেরে দেয়।
জানা যায়, কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২২-২০২৩ সেশনের বার্ষিক সাধারণ সভায় সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক প্রদত্ত হিসাবে গড়মিল পরিলক্ষিত হওয়াতে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদসহ বারের ৫ শতাধিক আইনজীবীর উদ্যোগে গত বছরের ১২ই জুন পুনরায় তদন্তের জন্য দাবি জানানো হয়।
পরবর্তীতে ২০২৩-২০২৪ সেশনের কার্যকরী কমিটির ২৩শে জুন জরুরি সভায় জেলা পিপি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিমকে আহ্বায়ক ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌসকে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ২১শে মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসানউল্লাহ খন্দকারের নিকট জমা দেন। এ তদন্ত প্রতিবেদনে ৪০ খাতে সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের দুর্নীতি ও অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে।
এর মধ্যে শুধু মাত্র বারের আয়ের নানাবিধ খাত থেকে ১ কোটি ৫৮ লাখ ২ হাজার ২৪৮ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বারের এক বছরের ব্যয়ের সকল খাত থেকে আরও ১ কোটি টাকার তহবিল তছরুপ করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
সবচাইতে চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে জেলা পরিষদের অর্থায়নে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মিত হওয়ার কথা। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পুরো কাজটি বারের তহবিলের টাকা খরচ করে নির্মাণ কাজ শেষ করে জেলা পরিষদের ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
১৫ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটির ১৫ সদস্যের মধ্যে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব সহ ১৩ জনের স্বাক্ষর রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা বারের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু তাহের বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কুমিল্লা বারের ইতিহাসে আমিই প্রথম সাধারণ সম্পাদক যে কি না পর পর দুই বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। বারে আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার দলের এক শ্রেণির সুবিধাভোগী ও বিএনপি জামায়াত এ হেন কাজটি করছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৮শে মার্চ এজিএম (সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা)। এটাকে সামনে রেখে তারা কল্পনাপ্রসূত ও বানোয়াট কাহিনী প্রচার করছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে তাদের সকল অসত্য অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি।
অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের অভিযোগ প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে জানতে চাইলে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ও বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস বলেন, আমরা অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম ভাইয়ের নেতৃত্বে ১৫ জন গত ৫/৬ মাস সময় নিয়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত করেছি। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে আবেগ নয়, বিবেক দিয়ে আমরা তদন্ত কাজ করে আমাদের রিপোর্ট সভাপতি বরাবর পেশ করেছি।
তিনি বলেন, যেহেতু আমরা পেশাদার না এবং জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন ছিল তাই আমাদের কাজে কিছুটা বেশি সময় লেগেছে। তবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের বিরুদ্ধে আড়াই কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য এবং সন্দেহাতীতভাবে সঠিক।