সুপ্রিম কোর্ট ভবনের ছাদ থেকে জমে থাকা বৃষ্টির পানি বিচারপতিদের আসনে গড়িয়ে পড়ায় আপিল বিভাগের কার্যক্রম সাময়িক ব্যাহত হয়। এজন্য প্রায় ৬০ বছর আগের এ ভবনের সংস্কারকাজ জরুরি হয়ে পড়ে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চলছে সংস্কারকাজ। এরই মধ্যে মূল ছাদের জলছাদ এবং তার ওপর বিভিন্ন সময়ে সিমেন্ট ও বালু দিয়ে লেপা স্তর তুলে ফেলা হয়েছে। এখন প্রধান বিচারপতির এজলাস কক্ষের ছাদ সংস্কারের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে।
আপিল বিভাগের এক নম্বর কোর্টের এজলাস কক্ষের সব আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে বাতিসহ লাইটিংয়ের সব উপকরণ। আইনজীবীদের বসার জন্য সব বেঞ্চ রাখা হয়েছে বারান্দায়। রাতের বৃষ্টিতে সেগুলো ভিজে একাকার।
সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে আপিল বিভাগের ছাদে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ড্রিল মেশিন দিয়ে তুলে ফেলা হয়েছে মূল ছাদের ওপরের কাঠামো। ছাদ যেন বৃষ্টিতে আর ভিজে না যায় সেজন্য বাঁশ দিয়ে ত্রিপল টানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ছাদ সংস্কারের কাজে নিয়োজিত গণপূর্তের কর্মচারীরা বলছেন, পুরনো এ ভবনের ছাদের মূল কাঠামোর ওপরে যেভাবে ফাটল মেরামতে বছরের পর বছর ঢালাই দেওয়া হয়েছে তাতে এর ওজন বেড়েছে কয়েকগুণ। বৃষ্টিতে পানি পড়ায় ছাদের ওজন বাড়ে আরও কয়েকগুণ। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা যে ঘটেনি এতদিনে সেটাই একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
তারা আরও বলেন, ছাদের মূল কাঠামোতেও ফাটল ধরেছে। এখন এ ছাদ কীভাবে সংস্কার হবে তার সিদ্ধান্ত দেবেন প্রকৌশলীরা। তবে শনিবার গভীর রাতে প্রচণ্ড শিলা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে প্রধান বিচারপতির এজলাস। এজলাস কক্ষের ছাদের অসংখ্য ফাটল দিয়ে ঝরছে পানি। সেই পানি অপসারণের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ৫/৬ জন কর্মচারী। তারা বালতি ভরে পানি ফেলছেন।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোছাইন বলেন, ছাদ চুইয়ে পানি গড়িয়ে পড়ার দিন থেকেই সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কত দিন লাগবে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
ছাদে বাঁশ টানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ভবনের ছাদে সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে, এখন তো যে কোনো সময় বৃষ্টি চলে আসতে পার, তাই শামিয়ানা টানানোর ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে যাতে বৃষ্টি নামলে তাৎক্ষণিক ঢাকনা দেওয়া যায়। তা না হলে কাজে ব্যাঘাত হতে পারে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ এএম আমিন উদ্দিন বলেন, প্রায় ৬০ বছর পুরানো ভবন এটি। অনেক সময় সংস্কারকাজও করা হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ার কারণে হয়তো লিক করে পানি পড়েছে। এটার জন্য ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ডাকা হয়েছে। গণপূর্তে প্রকৌশলীরা এসে দেখে গেছেন। এটা যেহেতু পুরানো ভবন তাই সচেতনার সঙ্গে এটির সংস্কারকাজ করতে হবে, যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। তাই এর সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে দুদিনের বৃষ্টিতে প্রধান বিচারপতির এজলাসে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ার ঘটনা ঘটে। এতে ২০ মিনিটের জন্য বিচার কাজ স্থগিত থাকে। পরে ছাদ সংস্কারের কাজে হাত দেয় গণপূর্ত বিভাগ। এ ঘটনার পর সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আপিল বিভাগের এক নম্বর কোর্টে ওপরে পুরো ছাদ ত্রিপল দিয়ে ডেকে রাখা হয়েছে। বিগত তিন দিন ধরে ছাদের দক্ষিণাংশ ত্রিপল দিয়ে ডেকে রাখা হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সকালে বিচারকাজ শুরু হলে ছাদ থেকে পানি পড়ার এ ঘটনা ঘটে। তখন কিছু সময়ের জন্য বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে বিচারপতিদের আসন বিন্যাসে কিছুটা পরিবর্তন করে পুনরায় বিচার কাজ শুরু করেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তাদের আসন গ্রহণ করে বিচার কাজ শুরু করেন।
১০টার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ছাদ থেকে এজলাসের (বিচারপতিদের বসার জায়গা) পূর্ব পাশে একজন বিচারপতির আসনের ওপর ছাদ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখেন এবং বিষয়টি তার বেঞ্চ অফিসারকে জানান। একপর্যায়ে ঘটনাটি প্রধান বিচারপতির নজরেও আসে। এরপর প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় চলে যান। পরে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পুনরায় ফিরে এসে বিচার কাজ শুরু করেন বিচারপতিরা।
জানা গেছে, ১৯৬৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট ভবন উদ্বোধন করেছিলেন আইয়ুব খান। যদিও এ ভবন নির্মাণের সার্বিক তদারকিতে ছিলেন গভর্নর মোনায়েম খান। ১৯৬৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। আর চৌকস প্রকৌশলীদের একটি দল ৪৩০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ও ৩৭০ ফুট প্রস্থের ১৯টি বিচারকক্ষ-সংবলিত ভবনটি মাত্র ৭৪ লাখ ৭৫ হাজার রুপিতে নির্মাণ করে তৎকালিন সরকার।