আমরা সবাই কোনো না কোনো কিছুর বিচার করি, সে অর্থে আমরা সবাই বিচারক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এ সময় যে যে স্তরেই থাকুক না কেনো সবক্ষেত্রে ন্যায় বিচারক হওয়াটা খুবই জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে শুক্রবার (৩ মে) রাতে মৌলভীবাজার পৌরসভা আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, প্রত্যেক পরিবারে, প্রত্যেক সমাজে বিচার মানে হচ্ছে ন্যায় সঙ্গত চিন্তা করা। এই ন্যায় চিন্তা থেকেই আমরা ন্যায় বিচারক হয়ে উঠি।
তিনি বলেন, আমরা বিচারকের আসনে বসে বিচার করি। কিন্তু রাস্তার ট্রাফিক পুলিশও একজন বিচারক। কারণ তিনি কোন গাড়ি যেতে দিবেন আর কোন গাড়িকে দিবেন না এটি তার বিচারের উপর নির্ভর করে।
আরও পড়ুন: অর্থবিত্ত নয়, সমাজে আইনের শাসন নিশ্চিত করাই আইনজীবীর কাজ: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সবাই কোনো না কোনো কিছুর বিচার করি, সবাই বিচারক। তাই আপনি যে স্তরেই থাকেন না কেনো সবক্ষেত্রে ন্যায় বিচারক হওয়াটা খুবই জরুরি।
তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসাবে আমার উপর দায়িত্ব পড়েছে প্রথাগত বিচারটা করা। সেখানে আমাদের অবশ্যই নির্মোহ বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র কাঠামো পেয়েছি, তার ভিত্তি হলো আমাদের সংবিধান।
ওবায়দুল হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। এজন্য প্রয়োজন দল ও মত পার্থক্য ভুলে একসঙ্গে কাজ করা ও একসঙ্গে পথ চলা। এটা আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে করতে পারব বলেই আমার বিশ্বাস।
তিনি আরো বলেন, মৌলভীবাজারের মানুষ আজকে যে সম্মান আমাকে দেখিয়েছেন তা কখনো ভুলার নয়। পৌরসভার মেয়র পৌরসভার কর্মকর্তাসহ সকলের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান প্রধান বিচারপতির
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, মৌলভীবাজারে জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর, বিচারপতির সহধমিনী বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণের সদস্য নাফিয়া বানু, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান, পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোঃ কামাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ প্রমুখ।
তাছাড়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট শান্তিপদ ঘোষ, সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট রাধাপদ দেব সজল, বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক কবি ও লেখক সৈয়দ মোসাহিদ আহমদ চুন্নু মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্ত প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিল ও প্যানেল মেয়র নাহিদ হোসেন, পূরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মাসুদ।
তাছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার, মৌলভীবাজারের বিভিন্ন আদালতের বিভিন্ন স্তরের বিচারক, আইন কর্মকর্তা, আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, জেলা শহরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌরসভার পক্ষ থেকে পৌরসভার পৌর মেয়র আলহাজ্ব ফজলুর রহমান দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সিম্বলিক ক্রেষ্ট ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী তোলে দেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে এক মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পরে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।