সাম্প্রতিককালে তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি ও জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়ার মধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে মর্মে সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (HRPB) গত ৫ মে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে।
রিট পিটিশনটি দায়ের করা পর গত ৬ মে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত আদেশের জন্য ৭ মে তারিখ রাখেন।
আজ আদালতে বিষয়টির উপরে আবারও শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে সিনিয়র এডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে এবং সরকারের অঙ্গীকার পরিবেশ রক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যত্রতত্র গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যেভাবে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে গাছ কাটার এক মহাউৎসব চলছে।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে নতুন পলিসি নির্ধারণের নির্দেশনা চেয়ে রিট
সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ শুনানিতে আরো বলেন যে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গাছপালা থাকা দরকার তা দিন দিন কমছে এবং সম্প্রতিকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে যার কারনে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
অন্যদিকে সামাজিক বনায়ন চুক্তিতে সারাদেশে লাগানো গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। যা বন্ধ না হলে বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে হবে বলেও আদালতে তিনি উল্লেখ করেন।
আজ বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শেষে বিবাদীদের বিরুদ্ধে দুই সাপ্তাহের রুল ইস্যু করে নিম্নোক্ত বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়,
১. সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে (ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ ব্যতীত) ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না;
২. ঢাকা শহর সহ অন্যান্য জেলা এবং উপজেলা শহরে গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না;
আরও পড়ুন: আইন সহজ বিষয়, কোনো বিচারেই এমনটি দাবী করা যাবে না: প্রধান বিচারপতি
৩. সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ এর বিধানে গাছ লাগানোর চুক্তিভুক্ত পক্ষকে অর্থ প্রদানের বিধান সংযুক্ত করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না;
৪. গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে ৭ দিনের মধ্যে পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিজ্ঞানী, প্রফেসর, পরিবেশ বিজ্ঞান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেসর পরিবেশ বিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না;
৫. গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার ইস্যু করে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা পরিবেশ অফিসার, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সেক্রেটারি এবং সিভিল সার্জনের সমন্বয়ে কমিটি কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না;
৬. গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার ইস্যু করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে; কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ল্যান্ড এবং এলজিইডি এর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারে সমন্বয়ে কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না;
৭. কমিটি গঠন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সকল বিবাদীগণ নিজ নিজ এলাকায় যাতে কোন গাছ কাটা না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না;
আরও পড়ুন: পরিবেশ রক্ষায় ঢাকাসহ সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে রিট
HRPB-এর পক্ষে রিট পিটিশনার হলেন এডভোকেট মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী, এডভোকেট মোঃ এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া এবং অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈই।
বিবাদীরা হলেন সচিব কেবিনেট বিভাগ; মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়; সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়; সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; ডিরেক্টর জেনারেল পরিবেশ বিভাগ; মেয়র, ঢাকা উত্তর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন; প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা উত্তরা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন; প্রধান প্রকৌশলী, এলজিইডি, প্রধান বন সংরক্ষক; প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক মহাসড়ক বিভাগ ও আইজিপি বাংলাদেশ পুলিশ।
রিট টিশনটি শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন এডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল, অ্যাডভোকেট নাছরিন সুলতানা এবং অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। সরকার পক্ষে ছিলেন এএজি মো. রেজাউল হক।