কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মিত হচ্ছে বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’
ছবি : কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে নির্মাণাধীন বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জের নকশা

কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মিত হচ্ছে বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : বিচারপ্রার্থী ও বিচার সংশ্লিষ্ট কাজে কক্সবাজারের বিভিন্ন আদালতে আসা নাগরিকদের বিশ্রামের জন্য নির্মিত হচ্ছে বহুমুখী আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার “ন্যায়কুঞ্জ”। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ পূর্ব কোনায়, জেলা জজের বাসভবনের সীমানা দেওয়ালের উত্তর পার্শ্বে, কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পশ্চিম দক্ষিণ কোনায় ন্যায়কুঞ্জ নামক বিশ্রামাগারটি নির্মান করা হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, আইন ও বিচার বিভাগের তত্বাবধানে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ কাজটি বাস্তবায়ন করছে। কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ এর নির্দেশনায় ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত জমিটি গণপূর্ত বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কাজটি বাস্তবায়নে জেলা জজশীপ থেকে সম্ভব সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

জেলা নাজির বেদারুল আলম আরো জানান, বিচারপ্রার্থীদের অধিকতর সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে জেলা জজ আদালত ভবন ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের মধ্যবর্তী স্থানে ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণের জন্য জমিটি জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপ সহকারী  প্রকৌশলী মোঃ ওমর ফারুক ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণের জন্য কক্সবাজার আদালত ভবন সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবিত জমির অবস্থান অনুযায়ী কমন নকসাটি সংশোধন করে নতুন একটি ‘সি’ টাইপ প্ল্যান নকসা তৈরি করা হয়েছে। সংশোধিত নতুন নকসাটি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কর্তৃক অনুমোদন দেওয়ার পর প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগকৃত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এইচ.এম কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারকে গণপূর্ত বিভাগ থেকে লেআউট দেওয়ার পর প্রাথমিকভাবে সংশোধিত নতুন ডিজাইন প্ল্যান অনুযায়ী ন্যায়কুঞ্জ স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন বলে জানান, উপ সহকারী  প্রকৌশলী মোঃ ওমর ফারুক।

আরও পড়ুন: কক্সবাজার কোর্ট কম্পাউন্ডে সিজেএম ভবন নির্মাণের দাবি আইনজীবীদের

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আরিফুর রহমান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, নির্মাণাধীন ন্যায়কুঞ্জের আয়তন এক হাজার বর্গফুট। অত্যাধুনিক নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে ডিজাইন করা সুপরিসর আধুনিক বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জে একত্রে ৬০/৭০ জন বিচার প্রার্থীদের বসার জায়গা, ওয়াশরুম, ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার, ফাস্টফুডের দোকান, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা কক্ষে বসার ব্যবস্থা সহ বহুমুখী সুবিধা থাকবে।

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, কক্সবাজার একটি পর্যটন এলাকা হিসাবে গুরুত্ব দিয়ে স্থাপত্য অধিদপ্তর ন্যায়কুঞ্জের সংশোধিত নকসাটি তৈরি করেছেন। “দেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য ন্যায়কুঞ্জ নামে বিচারপ্রার্থী বিশ্রামাগার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প” এর অধীনে প্রায় ৫২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারে ন্যায়কুঞ্জের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগামী ২ মাসের মধ্যে অর্থাৎ চলতি বছরের জুলাই এর মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান জানিয়েছেন।

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি কক্সবাজার ন্যায়কুঞ্জের আনুষ্ঠানিক ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করার সম্ভাবনা রয়েছে। যার সফরসূচি সহসাই জানা যাবে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো: রেজাউর রহমান নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ সম্পর্কে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, মানুষ দূর-দূরাস্ত থেকে আদালতে  আসেন, কেউ আসেন বিপদে পড়ে, আবার কেউ বিপদ থেকে উদ্ধার হতে এখানে আসেন। এসব বিচারপ্রার্থীরা আইনজীবীর চেম্বারে গিয়ে সাক্ষাতের পর এবং আদালতে যাওয়ার আগে-পরে আর বিশ্রামের জন্য কমন কোন জায়গা পাননা। বিশেষ করে নারী ও বয়স্ক বিচারপ্রার্থীদের আদালত পাড়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ বিচারপ্রার্থীদের সেই দুর্ভোগ লাগবে সহায়ক হবে বলে পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো: রেজাউর রহমান মনে করেন।

আরও পড়ুন: বিচার বিভাগীয় স্টাফদের নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে : কক্সবাজারের জেলা জজ

কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, বিচারপ্রার্থীদের বসার জন্য একটি স্থান খুবই প্রয়োজন ছিলো। কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট বিচারব্যবস্থার অংশ বলে তিনি মন্তব্য করেন। কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলামের মতে, ন্যায়কুঞ্জ বিচারপ্রার্থীদের স্বস্তি ও নিরাপত্তা বাড়াবে। পাশাপাশি অযথা বিড়ম্বনা ও হয়রানি কমাবে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, বিচারপ্রার্থীরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের কাছে আসেন। জুডিসিয়ারির স্টেকহোল্ডার হচ্ছেন তারা। তাদের জন্য বিচার। কিন্তু তাদের বসার জন্য, ওয়াশরুম সারার জন্য কোন ব্যবস্থা আদালত প্রাঙ্গণে নেই। আবার বিচারপ্রার্থীরা আদালত এলাকায় বিভিন্ন সময় টাউট বাটপারের খপ্পরে পড়ে অযথা হয়রানির শিকার হন। নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ বিচারপ্রার্থীদের একদিকে, হয়রানি থেকে মুক্ত করবে, অন্যদিকে নিরাপদে বসার জায়গা হবে। তবে ন্যায়কুঞ্জ যেন দালাল, টাউট, বাটপারের দখলে চলে নাযায়, তাদের ব্যবসার ক্ষেত্র বানিয়ে নাফেলে। সেদিকেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুনজর রাখতে হবে।

কক্সবাজার হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, কক্সবাজার আদালত পাড়ায় আসা বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট করে বসার স্থান তৈরি করা বিচার বিভাগ তথা সরকারের পক্ষ থেকে একটি ভালো উদ্যোগ। এর যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। নির্মাণাধীন ন্যায়কুঞ্জ আদালতের বারান্দায় বিচারপ্রার্থীদের ভিড় কমাতে সহায়ক হবে বলে অ্যাডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু আশাবাদ ব্যক্ত করেন।