এক বিচারককের ওএসডির দিনে অন্য বিচারকের আবেগঘন স্ট্যাটাস
বিচারক (প্রতীকী ছবি)

বিচারকের বিচার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপ্রার্থীর অভিযোগ

টাঙ্গাইলের যুগ্ম দায়রা জজ ১ নং আদালতের সাবেক বিচারক ও বর্তমানে রংপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুরুজ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন এক বিচারপ্রার্থী।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর সোমবার (১৩ মে) ঢাকা খিলক্ষেতের বাসিন্দা মো. মাহফুজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি লিখিতভাবে এই আবেদন জানান।

অভিযোগে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের যুগ্ম দায়রা জজ ১ নং আদালতের বিচারক মো. সুরুজ সরকার কর্তৃক দায়রা মামলা নং- ২৪৯/২০২১ এর বিভ্রান্তিমূলক তারিখ নির্ধারণ এবং রায় ও আদেশের প্রেক্ষিতে আমাকে আট মাস পাঁচ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। এতে তার লক্ষ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কখনোই সম্ভব নয়। অভিযোগ সম্বলিত আবেদনের সঙ্গে তিনি ২৪টি নথি যুক্ত করে দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগে মাহফুজুল বলেছেন, টাঙ্গাইলের যুগ্ম দায়রা জজ, ১ নং আদালতের দায়রা মামলা নং- ২৪৯/২০২১ এর বিবাদী/আসামী/আপিলকারী। জনৈক হাসমত আলী বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩ মার্চ টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এনআই এ্যাক্টের এর ১৩৮ ধারায় ২০ লাখ টাকার একটি সি.আর. মামলা নং-২৮/২০২০ দায়ের করেন। ওই বছরের ১০ নভেম্বর আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রাপ্ত হন।

মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হলে দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয় যার নম্বর ২৪৯/২০২১। উক্ত মামলাটি বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য যুগ্ম দায়রা জজ, ১ম আদালত টাঙ্গাইলে প্রেরণ করা হয়। বিগত ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি অভিযোগকারী আদালতে হাজির হয়ে পূর্ব শর্তে জামিন লাভ করেন এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫(গ) ধারা অনুযায়ী মামলার দায় হতে অব্যাহিতর আবেদন জানান।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সফরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের ১৩ বিচারক

আদালত তার আবেদন না মঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন এবং সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করেন। কিন্তু মহামারী করোনার কারণে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। একই তারিখে একই ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। যার ফলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

সুপ্রিম কোর্ট হতে ২০২১ সালের ১৯ জুন এক আদেশে অধস্তন দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালত এবং ট্রাইব্যুনালসমূহে শারীরিক উপস্থিতিতে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন আইনজীবী মৃত্যুবরণ করায় আদালতের কার্যক্রম স্থগিত থাকে। আবারো লক ডাউন আরোপ করায় বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকে।

২০২১ সালের ১২ আগস্ট আমার আইনজীবী মামলার তারিখ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখতে পান আদালতের কজলিস্টে উক্ত মামলা বিগত ২০২০ সালের ২১ জুন (প্রকৃতপক্ষে হবে ২০২১ সালের ২১ জুন) তারিখ নির্ধারণ আছে ও উক্ত তারিখে আদালত আসামির জামিন বাতিলপূর্বক পলাতক দেখিয়ে তার ও তার র নিয়োজিত আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে শুধু বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

এছাড়া আসামি পক্ষকে জেরা করার সুযোগ না দিয়ে এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা না করেই এবং যুক্তিতর্কের জন্য তারিখ ধার্য না করেই ২০২১ সালের ৩০ জুন মামলায় একতরফাভাবে রায় ও আদেশ প্রদান করেন। রায়ে আসামিকে এক বছরের সাজা ও একুশ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করে রায় ও আদেশ দেন।

আরও পড়ুন: মামলা নয়, সমঝোতায় খেলাপি ঋণ আদায়ের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

অভিযোগে আরো বলা হয়, ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর টাঙ্গাইলের যুগ্ম দায়রা জজ ১ নং আদালতের বিচারক মোঃ সুরুজ সরকার কর্তৃক বিভ্রান্তিমূলক তারিখ নির্ধারণ ও রায় ও আদেশ প্রদানের বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু আইনজীবী সমিতি আজ পর্যন্ত কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই।

তার বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেপ্তারী পরোয়ানার প্রেক্ষিতে বিগত ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি খিলক্ষেত থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আপিলের শর্তে জামিন লাভ করেন। তিনি জামিনে বেরিয়ে টাঙ্গাইলের দায়রা জজ আদালতে আপীল দায়ের করেন। যার নম্বর ৫৫৫/২০২২ । আপীলটি এখনো চলমান।

অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টকে মাহফুজল বলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি টাঙ্গাইলের তৎকালীন ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সুরুজ সরকার বর্তমানে রংপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন। আমি তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।