জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার (লিগ্যাল এইড) নানা অসামাঞ্জসতা ও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেন, এই সংস্থার জাতীয় কমিটিতে প্রধান বিচারপতির কোনো ভূমিকা নেই। প্রধান বিচারপতির কোনো প্রতিনিধিও নেই। মন্ত্রীর পরে কমিটিতে যারা আছেন, সব আমলা। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি কার কাছে দায়বদ্ধ, তাও স্পষ্ট করা নেই। এ বিষয়গুলি এনামলি (অসামাঞ্জসতা)।
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি আয়োজিত ‘স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ-বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এবং “উচ্চ আদালতে স্মার্ট আইনি সেবার প্রসার” শীর্ষক আলোচনা সভায় মঙ্গলবার (১৪ মে) প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৪ উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাইমা হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ্ মঞ্জুরুল হক, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এই কমিটির সদস্য সচিব অবন্তী নুরুল বক্তব্য রাখেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি যতটুকু দেখলাম, জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার কমিটি গঠনের কার্যাবলিতে বলা আছে কমিটিতে কারা থাকবেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতির কোনো প্রতিনিধি সেখানে নেই। রেজিস্টার জেনারেল সেখানের সদস্য হিসেবে আছেন। কিন্তু তিনি সেখানে পদাধিকার বলে। আমার দেয়ার, না দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। আবার সব সচিবরা আছেন। আরও দুইজন আছেন যাদেরকে সংসদসের স্পিকার মনোনীত করবেন। লিগ্যাল এইড বা আইনি সেবার এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কোনো রোল নেই।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে নির্মাণ করা হবে সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট : পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে যে লিগ্যাল এইড কমিটি আছে, এইখানে প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন সভাপতি হবেন। তিনি হবেন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, তার সঙ্গে কে থাকবেন সেটাও বলা আছে। কিন্তু তিনি কার কাছে দায়বদ্ধ? জাতীয় আইনগত সহায়তার কাছে নাকি প্রধান বিচারপতির কাছে? এ বিষয়টি স্পষ্ট করা নেই।
এ সময় তিনি ভারতের জাতীয় আইনগত সহায়তা (ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিস অথোরিটি) সংস্থার উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানের প্রধান হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি, আর তার প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন। সিনিয়র ডিস্ট্রিক জাজরা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। বাজেট কিন্তু সরকার থেকে আসে। সবখানে কিন্তু বিচার বিভাগের প্রাধান্য।
তিনি বলেন, আর আমাদের লিগ্যাল এইড কমিটিতে মন্ত্রীতো আছেনই। যদিও তিনি একজন আইনজীবী। সব সময় আইনজীবীই আইনমন্ত্রী হবেন, এটাও না। তিনি বাদে বাকী যারা আছেন সবই কিন্তু আমলা। অমুক সেক্রেটারি, তমুক সেক্রেটারি। পৃথিবীর সব থেকে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, তাদের চিmন্তা আর আমাদের চিন্তার মধ্যে পার্থক্য দেখেন।
জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার বাজেট সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাজেট যদি না থাকে আপনি যা ই বলেন, কিছু করতে পারবেন না। ক্ষুধা যখন লাগে তখন কিন্তু ক্ষুধাই লাগে। পেট চো চো করে। আপনি লিগ্যাল এইড দিচ্ছেন, যে আইনজীবী আমাদের এই সহায়তা দিচ্ছেন তাকে কি আমরা সামান্য কিছু দিতে পারছি, প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি।
আরও পড়ুন: বিচারকের বিচার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপ্রার্থীর অভিযোগ
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সাবেক তিনজন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জানলাম বাজেট অনেক কম। মাত্র ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। একটা অনুষ্ঠান করতে গেলে বেশি টাকা খরচ করা যাবে না। তাতে বাধা দেয়। কে বাধা দেয়? জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা। এই যদি হয় অবস্থা। বাজেট যদি কম থাকে, তাহলে কেমন করে কাজ করবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, মানুষের দৌড়গড়ায় যদি আপনি পৌঁছাতে চান, মানুষের জন্য যদি আইনগত সহায়তা পৌঁছাতে চান তাহলে অবশ্যই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এটা চিন্তা করা দরকার।
অনুষ্ঠানে আপীল বিভাগের বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম বলেন, সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের প্রতিটি বেঞ্চ যদি মাসে কমপক্ষে একটি করে এবং আপীল বিভাগ যদি মাসে কমপক্ষে দুটি করে লিগ্যাল এইডের মামলা নিষ্পত্তি করে তাহলে সুপ্রীম কোর্টের লিগ্যাল এইডের মামলা খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবনে ক্ষমতা নয় সমতা চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আমাদের দেখিয়েগেছেন সমতা কাকে বলে। আমরা সেই সমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি কিন্তু আজও আমরা সেই সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজের যায়গা থেকে সমতার মধ্যে থাকার চেষ্টা করা। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে মোরালিটির যে অভাব সেটা ইম্প্রুভ করতে হবে।
বিচারপতি নাইমা হায়দার স্মার্ট লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের মন- মানসিকতার পরিবর্তনের উপর জোর প্রদান করেন।
আইনি সেবাকে আরো সহজ ও যুগোপযোগী করতে স্মার্ট জুডিসিয়ারির বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনালের জনাব মো: গোলাম রব্বানী।