ব্র্যাক ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় জমা থাকা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি (এমএলএম) ইউনিপে টু ইউ’র গ্রাহকদের ৪২০ কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ঘোষিত রায় প্রকাশিত হয়েছে।
আপিল বিভাগ ঘোষিত ১২ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম রায়টি লিখেছেন।
রায়ে বলা হয়েছে, আদালত কর্তৃক সরকারের কোষাগারে স্থানান্তর করা এই অর্থ/সম্পত্তির প্রতি যদি কারও দাবি বা আগ্রহ থাকে, তাহলে তারা (গ্রাহকরা) প্রতিকারের জন্য উপযুক্ত আদালতে যেতে পারেন। তাৎক্ষণিকভাবে তারা পাওনা আদায়ের জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনের কাছে যেতে পারবেন। কারণ রায়ে দেনাদারদের ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এখন হাইকোর্ট বিভাগ আইন অনুযায়ী বিষয়টি নিষ্পত্তির এখতিয়ার পেয়েছেন।
রায়ে আরো বলা হয়েছে, তাৎক্ষণিক ক্ষেত্রে, এটি স্বীকার করা হয় যে দুর্নীতি দমন কমিশন আজ পর্যন্ত আইন অনুসারে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির একটিও বাজেয়াপ্ত করেনি। রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে এই রায় প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় নোটিশ প্রকাশ করতে এবং বিবাদী, ডিক্রিধারক, বাদী বা অন্য দাবিদারের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রিটের পক্ষের আইনজীবী রাফসান আলভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপিল বিভাগের এই রায় শুধু ইউনিপে টু ইউ’র গ্রাহকদের পাশাপাশি ডেসটিনি, ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতারিত গ্রাহকদের পাওনা আদায়ে গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে।
এর আগে গত ৫ মার্চ ব্র্যাক ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় জমা থাকা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি (এমএলএম) ইউনিপে টু ইউ’র গ্রাহকদের ৪২০ কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: ৪২০ কোটি টাকা ফেরত পাবেন ইউনিপে টু ইউ’র গ্রাহকরা
আদালতে গ্রাহকদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট রাফসান আলভী।
সেদিন ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেছিলেন, আপিল বিভাগে ইউনিপে টু ইউ’র মামলার শুনানি হয়েছে। ইউনিপে টু ইউ’র গ্রাহকদের যে টাকা জমা ছিল। ব্র্যাক ব্যাংক এলিফ্যান্ট শাখায় যে ৪২০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। আপিল বিভাগ আজকে নির্দেশ দিয়েছেন সেটাকে সরকারি কোষাগারে স্থানান্তর করে, সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা বলা আছে সেটা দেবে। এরপর ইউনিপে টু ইউ’র গ্রাহক যারা আছেন তারা ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করবেন। তারপর তাদের আবেদন যাচাই বাছাই করে তারা সিদ্ধান্ত দেবে।
তিনি বলেন, এ রায়ের ফলে গ্রাহকদের টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার অনীক বলেন, আমরা সর্বোচ্চ আদালতে বলেছি, আমরা ডিগ্রি পেয়েছি। তারপর এটিতে ক্রিমিনাল একটা মামলা হয়ে ক্রোক করার অর্ডার দিয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত দুদক বা সরকার এটাকে ক্রোক করেনি। সুতরাং আমাদের কেন টাকা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে আইনের যে ধারা রয়েছে, সেই ধারাগুলো মেনে অবরুদ্ধ এই টাকাগুলো যেন আমাদের ফেরত দেওয়া হয়। আপিল বিভাগ আমাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে আপিল বিভাগ বলে দিলেন, হ্যাঁ অবরুদ্ধ এই টাকাটা সরকারি কোষাগারে নিয়ে আইনগত যারা গ্রাহক তাদের যেন ফেরত দেওয়া হয়।
গ্রাহকেরা টাকা কীভাবে পাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকাগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাওয়ার পরে নির্দিষ্টভাবে আবেদন করতে হবে।
এর আগে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি (এমএলএম) ইউনিপে টু ইউ’র কয়েকজন গ্রাহক টাকা ফেরত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন।