দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল (এম এ) হাফিজ বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মিথ্যা মামলা ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ এসময় একজন বেতনভোগী কর্মকর্তা কিভাবে শত কোটি টাকার মালিক হন সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) তাঁর বিচারিক কর্মদিবসের শেষ দিনে তাকে দেওয়া বিদায় সম্ভাষণের সময় তিনি মিথ্যা মামলা ও দুর্নীতি সম্পর্কে এসব কথা বলেন। আপিল বিভাগে একমাসের কিছু বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে গেলেন বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ। আগামী শনিবার (৭ জুন) তার কর্মজীবন শেষ হলেও রীতি অনুযায়ী আজ তাকে বিদায়ী সম্ভাষন দেওয়া হয়।
বিচারপতি আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘সময়ের বিবর্তনে অপরাধের ধরণ প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে, যা আমাদের সন্তানদের ভয়াভহ অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পারিবারিক সম্প্রীতি, সংস্কৃতি, দীর্ঘ দিনের লালিত মূল্যবোধ ইত্যাদিতে ভাঙচুর হচ্ছে। কিশোর গ্যাং’র উত্থান ঘটেছে। মাদক, সামাজিক অনাচারসহ অস্ত্রের প্রতিযোগিতা হুমকি ও আশঙ্কার বিস্তার ঘটেছে। আর এগুলো টেকসই উন্নয়ন, শান্তি, প্রসারিত ভালোবাসা, ধৈর্য ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে। আমার ধারণায় সমস্যার শেকড় প্রোথিত আছে দেশের গড়িষ্ঠ সংখ্যক মানুষ ও মানবতার প্রতি পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না হওয়ায়।’
আরও পড়ুন: চাঁদা না দেওয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ বন্ধ: ব্যবস্থার নির্দেশ হাইকোর্টের
তিনি বলেন, ‘সম্পদ-সম্পত্তি, অপরাধ, নারী ও শিশু নির্যাতন ও অধিকার বিষয়ক মোকদ্দমায় প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিচার বিভাগকে এর ভার বহন করতে হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে এটা মিথ্যা মামলা নির্ধারিত হয়তো বা ঠিকই হচ্ছে কিন্তু এতে আদালতের প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে। মিথ্যা মামলা ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিচারপতি আব্দুল হাফিজ বলেন, দুর্নীতি আমাদের সকল অর্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্নীতির ব্যাপকতা অনেক। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাক্তিদের হাত থেকে অফিস আদালতকে মুক্ত রাখতে হবে। একজন বেতনভোগী কর্মকর্তা কিভাবে কোটি কোটি এমনকি শত কোটি টাকার মালিক হন তা দেশবাসীকে হতবাক করে। তাই এগুলোকে রোধ করতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’
বিদায় বেলায় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষে সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বিচারপতির কর্মজীবন উল্লেখ করে সম্ভাষণ জানান। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিগণ এ সময় এজলাসে ছিলেন।
এর আগে সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, গত ২৪ এপ্রিল হাইকোর্টের তিন বিচারক যথাক্রমে বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরদিন তিনজনকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে শপথ পাঠ করান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।