১৯ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা আত্মসাতের মামলায় বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জাল করে আসামির নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগে কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং আইনজীবীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে সোমবার (১ জুলাই) কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ মুনসী আবদুল মজিদের আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।
অভিযোগপত্রে কক্সবাজারের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) সাদিকুল ইসলাম তালুকদারকেও আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক স্টেনোগ্রাফার মো. জাফর আহম্মদ।
কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০১৪ সালে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন কক্সবাজারের মহেশখালীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণকৃত চিংড়ি জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের ২৩ কোটি টাকা প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলার পরপরই এক নম্বর আসামী কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নাম জালিয়াতির মাধ্যমে বাদ দিয়ে নথি দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়ে পাঠান কক্সবাজারের তৎকালীন স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) সাদিকুল ইসলাম তালুকদার।
এ কারণে অভিযোগপত্রে সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ অন্য চারজনকেও আসামি করা হয়েছে।
আদালত ও দুদক সূত্র জানায়, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় অধিগ্রহণ করা জমির চিংড়ি, ঘরবাড়িসহ অবকাঠামোর বিপরীতে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয় ২৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫টি অস্তিত্বহীন চিংড়ি ঘের দেখিয়ে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয় ৪৬ কোটি টাকা। এ থেকে নানা কৌশলে ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।
এ ঘটনায় ২০১৪ সালে মাতারবাড়ীর ব্যবসায়ী এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। দুদক দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৯ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। পরে আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।