কক্সবাজারের ডিসিকে হাইকোর্টে তলব
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে: হাইকোর্ট

আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় অনেক সরকারি কর্মকর্তা অঢেল সম্পদের মালিক হচ্ছেন। এটা বাঞ্ছনীয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় উচ্চ আদালত বলেন, সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। একে আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। সবাইকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

দুর্নীতিরোধে সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব আইন অনুযায়ী দাখিল ও ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশনা চেয়ে রিটের শুনানিতে মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

রিটের শুনানিতে সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে রিটকারী আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস বলেন, সরকারি কর্মচারীদের একটি অংশ ব্যাপক দুর্নীতি করছে। বিভিন্ন সময় খবর-প্রতিবেদনে এসেছে তারা অর্থ পাচার করেছে এবং এ নিয়ে বিবাদীদের উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই। এর ফলে জনগণ তাদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।

আরও পড়ুন: যেকোনো উপায়ে দুর্নীতি-অর্থপাচার বন্ধ করতে হবে : হাইকোর্ট

এ আইনজীবী বলেন, সংসদ সদস্যরা সরকারি কর্মচারীর মতো সরকারি কোষাগার থেকে কোনো বেতন পান না। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ ১২(৩)(খ) অনুসারে সংসদ নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে সম্পদের বিবরণী এবং আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া জনগণের করের টাকা থেকে।

তিনি বলেন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) দেওয়া তথ্য মতে, রাজস্বের ৪৩ শতাংশ খরচ করা হয় তাদের বেতন-ভাতা বাবদ। সুতরাং তাদের সম্পদের বিবরণী জানার অধিকার জনগণের আছে। অথচ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর ১৩(১) (২) বিধিমালা অনুসারে চাকরিতে যোগ দেওয়ার এবং প্রতি ৫ বছর পর পর সম্পদ বিবরণী দেওয়ার বিধান আছে।

রিটকারী আইনজীবী বলেন, দুর্নীতি ঠেকাতে এই বিধানের যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার। তবে এই বিধিমালার ১০ বিধি অনুসারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধারদেনা বা আর্থিক প্রতিদান সম্পদ বিবরণীতে প্রকাশে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ রকম আরও কতগুলো অস্পষ্ট ধারা বিধানের সুযোগ তারা নিয়ে থাকেন। আর এ ধরনের অস্পষ্টতা-অস্বচ্ছতা দুর্নীতি সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুন: বেনজীর-ম‌তিউরের সম্পদের তথ্য চেয়ে দুদকের নো‌টিশ জা‌রি

সুবীর নন্দী বলেন, সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই বেনজীর-মতিউরদের মতো শীর্ষ পদধারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তখন আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে। এ রকম ব্যক্তিরা শীর্ষ পদে থাকলে তারা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন না তাদের সম্পদ রক্ষা করবেন? স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্র, জনগণ, সার্বভৌমত্ব রক্ষা না করে তারা তাদের নিজেদের সম্পদই রক্ষা করবেন।

শুনানির সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, দুর্নীতি-অর্থপাচার সুশাসন ও উন্নয়নের অন্তরায়। তাই যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি-অর্থপাচার বন্ধ করা উচিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ গড়তে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি-অর্থপাচার দিয়ে সোনার মানুষ গড়া যায় না। এ জন্য সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। একে আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। সবাইকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

হাইকোর্ট বলেন, ভারতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী সংক্রান্ত আইন আছে। সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হয়। আবার অবসরে যাওয়ার আগেও দিতে হয়। দুই হিসাবের মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি হেরফের হলেই ধরা হয় তিনি দুর্নীতি করেছেন। আমাদের দেশে আইন আছে। কিন্তু প্রয়োগ নেই।

আরও পড়ুন: ১২ বছরেও তদন্ত শেষ না হওয়া বিচারব্যবস্থার সঙ্গে উপহাস: হাইকোর্ট

শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তখন জোট সরকার জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল, যা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছিলেন। এই সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে।

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরাই এখন প্রধান কাজ। তা করার জন্য যা যা করা দরকার তা করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দেওয়ার বিধান আছে, সুতরাং তারা সম্পদ বিবরণী দিতে বাধ্য। কিন্তু বিধান বাস্তবায়নে যাতে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অহেতুক নাজেহাল না হন, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে।

দুদকের আইনজীবী এ কে এম ফজলুল হক শুনানিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী সংক্রান্ত আইন-বিধি সংশোধন করে অস্পষ্টতা দূর করে যথাযথ প্রয়োগের কথা বলেন। সব পক্ষের শুনানির পর রুলসহ আদেশ দেন উচ্চ আদালত।