চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে গৃহবধূকে ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যার দায়ে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদেরকে অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। রায়ে অর্থদণ্ডের টাকা আদায় করে ভিকটিমের পরিবারকে প্রদান করতে বলেছেন বিচারক।
আজ বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক এবং জেলা ও দায়রা জজ নরেশ চন্দ্র সরকার এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ভোলাহাট উপজেলার বালুটুংগী গ্রামের মৃত গামজাদের ছেলে জাক্কার, একই গ্রামের মৃত মিয়ারুদ্দিনের ছেলে মুনসুর আলী ও মুশরীভুজা গ্রামের আব্দুল কারিমের ছেলে মফিদুল ইসলাম ওরফে সাহিরুল।
রায়ে আদালত বলেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামী জাক্কার ও মো. মফিদুল ইসলাম ওরফে সহিরুলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(৩) ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হলো।
এছাড়াও তাদেরকে এবং আসামী মুনসুর আলীকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হলো।
সকল সাজা একত্রে চলবে।
আসামি জাক্কার ও মো. মফিদুল ইসলাম ওরফে সহিরুল থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(৩) ধারার অধীন প্রদত্ত অর্থদণ্ডের ২ লাখ টাকা উক্ত আইনের ধারা ১৫ বা ধারা ১৬ এর বিধান মোতাবেক আদায় পূর্বক ভুক্তভোগীর পরিবারকে প্রদান করার ব্যবস্থা করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা কালেক্টরকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে আইনজীবীদের আদালত বর্জন
এই মামলায় দণ্ডিত আসামি জাক্কার ও মো. মফিদুল ইসলাম ওরফে সহিরুল নয় মাস ২৭ দিন হাজতবাস এবং মুনসুর আলীর ৩ বছর ১০ মাস ১৫ দিন হাজত বাস উক্ত কারাদণ্ড থেকে বাদ যাবে। আসামিদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করা হোক।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট এনামুল হক জানান, মুনসুর আলী দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এছাড়া মামলার তদন্তে হত্যার প্রমাণ পাওয়ায় তিন আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট ভোলাহাট উপজেলার ঘাইবাড়ী গ্রামের রাঙ্গামাইট্যা বিলে ঘাস কাটতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন একই গ্রামের মৃত এন্তাজ আলীর স্ত্রী সেমালী খাতুন কান্দুনী (৪৫)। ধর্ষণের পর তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
পরদিন সকালে মাথাবিহীন রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট রাতে ভোলাহাট থানায় মামলা করেন নিহতের মেয়ে মোসা. শারাবনী বেগম।
মামলার তদন্ত শেষে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ভোলাহাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন। দীর্ঘ সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে তিন আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা হয়।