সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত ১২ বছরেও শেষ হয়নি এবং যে কারণে মামলাটি এখনো বিচারের মুখ দেখেনি উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে মামলাটি ক্রমাগত ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার সঙ্গে উপহাস করে চলছে।
‘মো. জিল্লুর রহমান এবং অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ এবং অন্যান্য’ শীর্ষক এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে। রিটটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ মে পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ রায় দেন। ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি গতকাল মঙ্গলবার (২ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, দেশে হত্যার বিচার হতে কখনো কখনো ২০ বছরের বেশি সময় লাগে। হত্যা মামলায় যদি কোনো রাজনৈতিক রং দেওয়া হয়, তাহলে এর চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এজাহার ২১ বছরের বেশি সময়েও দায়ের করা যায়নি।
রায়ে বলা হয়, ঘটনার ১২ বছরেও সাগর–রুনি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হয়নি এবং যে কারণে এটি এখনো বিচারের মুখ দেখেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মামলাটি ক্রমাগত ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার সঙ্গে উপহাস করে চলেছে এবং অপূরণীয় ক্ষতি করছে, যা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোর মাধ্যমে কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছিল।
আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা অবৈধ : হাইকোর্ট
এর আগে ২০২১ সালে বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত আসামিকে কনডেমড সেলে রাখার বৈধতা নিয়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কনডেমড সেলে থাকা তিন আসামি রিটটি করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ১৩ মে পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ রায় দেন।
রায়ে বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে নির্জন কারাবাসে (কনডেমড সেল হিসেবে পরিচিত) রাখা যাবে না বলা হয়। এই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। এর শুনানি নিয়ে গত ১৫ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করেন। একই সঙ্গে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। সাগর সে সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। গত রোববার ১১১ বারের মতো এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে।