মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জের রিট মামলার শুনানির অংশ হিসেবে দুজন বিচারপতি দেশের দুটি কারাগার পরিদর্শন করে সেখানকার (ফাঁসির আসামির) কনডেম সেলের চিত্র রায়ে তুলে ধরেছেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না বলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে তাদের কারাগার পরিদর্শনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
আলোচিত এই রায়ের ৪৮ পাতায় বলা হয়েছে যে, এই মামলার শুনানির অংশ হিসেবে আমরা দুজন (বিচারপতি) দেশের দুটি কারাগার পরিদর্শন করেছি। সেখানকার বাস্তব অবস্থা দেখতে গত ১৬ জানুয়ারি এবং ২৭ জানুয়ারি যথাক্রমে আমরা কেরাণীগঞ্জের নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ফরিদপুর জেলা কারাগার পরিদর্শন করি।
‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলের অবস্থা কিছুটা উন্নত হলেও ফরিদপুর কারাগারের কনডেম সেলের অবস্থা ছিল খুবই অমানবিক। বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্রে উভয় জেলই প্রায় একই রকম অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং অত্যন্ত অবমাননাকর। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন বন্দিত্বের মানসিক এবং শারীরিক প্রভাব সহজেই বোঝা যায়।’
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা অবৈধ : হাইকোর্ট
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না বলে গত ১৩ মে রায় দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
তবে হাইকোর্টের এই রায়টি রাষ্ট্র পক্ষের আবেদনে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত। এ বিষয়ে আগামী ২৫ আগস্ট আপিল বিভাগে শুনানি হবে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
আরও পড়ুন: ১২ বছরেও তদন্ত শেষ না হওয়া বিচারব্যবস্থার সঙ্গে উপহাস: হাইকোর্ট
এর আগে গত বছরের ৫ এপ্রিল এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয় সেদিন। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।
২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।
রিট আবেদনকারীরা হলেন– চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।