সরকারি চাকরির নিয়োগে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নাকি আগের মতো সব কোটাই ফিরছে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট করা হয়েছিল। যার চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ৫ জুন হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টে সব কোটা ফিরছে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে সব কোটা, নাকি শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরছে, তা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে বলা যাবে।
সরকারি চাকরিতে স্বাধীনতার পর থেকেই কোটা ছিল। বিভিন্ন সময় তা কমে এবং বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালে এসে তা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা। শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল। পরে এ কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তারপর নাতি-নাতনি যুক্ত করা হয়।
এই কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি তুলে দেয় সরকার। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে।
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল
এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। অহিদুল বলেন, ২০১৮ সালের ওই পরিপত্রের আগে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। ২০১৩ সালে আপিল বিভাগের এক রায়ে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ ও তা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়। এই রায় থাকা সত্ত্বেও কোটাপদ্ধতি বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্রের বৈধতা নিয়ে রিট করা হয়।
তিনি বলেন, নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের জন্য রিটটি করেছিলেন তাঁরা। এখন হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
সরকারের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী, নবম গ্রেড এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে এসব গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি বাতিল করা হয়। প্রসঙ্গত, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে (১৪তম থেকে ২০তম গ্রেড) কোটাব্যবস্থা বহাল রয়েছে।
এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পরিপত্রের পাশাপাশি এর আগে দেওয়া হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের আদেশ প্রতিপালন না করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য অধিকারের প্রতি অবজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ: হাইকোর্ট
রায় ঘোষণার (গত ৫ জুন) পর রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকল না। স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রণয়নের আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা প্রবর্তন করা হয়।
তিনি বলেন, এটি চলমান অবস্থায় ২০১৮ সালে সরকার পরিপত্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের ক্ষেত্রে বাতিল করে দেয়। এটি অপমানজনক। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে ৩০ শতাংশ কোটা বাস্তবায়ন করার বিষয়টি স্পষ্টতই উল্লেখ রয়েছে।
কোটাপদ্ধতি পুনর্বহালের বিষয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা গত ৯ জুন চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৪ জুলাই শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।
ধার্য তারিখ ৪ জুলাই আপিল বিভাগে রিট আবেদনকারীপক্ষ এক দিনের সময়ের আরজি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুলাই আপিল বিভাগ ‘নট টুডে’ (সেদিন নয়) বলে আদেশ দেন।
আপিল বিভাগের আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হতে পারে।