মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ৮০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট এবং ২৭ লক্ষ ৭ হাজার নগদ টাকা উদ্ধারের মামলায় এক রোহিঙ্গা সহ ২ জন আসামীকে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। রায়ে আসামীদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত নগদ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এ রায় প্রদান করেন।
একই আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামীরা হলেন- কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ২ নম্বর শরনার্থী ক্যাম্পের মৃত কলিম উল্লাহ ও মৃত রহিমা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা নাজমুল হুদা (৩০) এবং কক্সবাজারের রামু উপজেলার মিটাছড়ি ইউনিয়নের চেইন্দা খোন্দকার পাড়ার ছলিম উল্লাহ মেম্বার ও রাবেয়া বেগমের পুত্র মোঃ শরীফ (৪২)।
রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামী মোঃ শরীফ আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং অপর দন্ডিত আসামী রোহিঙ্গা নাজমুল হুদা পলাতক রয়েছে।
রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ রেজাউর রহমান রেজা এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজের গেইটের একটু পূর্ব পাশে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে র্যাব-১৫ এর একটি টিম অভিযান চালিয়ে ২ জন আরোহী সহ একটি মটর সাইকেল আটক করে।
মটর সাইকেল আরোহী রোহিঙ্গা নাজমুল হুদা এবং মোঃ শরীফের স্বীকারোক্তি মতে একটি ট্রলি ব্যাগ থেকে ৮০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট এবং আরেকটি কাপড়ের ব্যাগ থেকে ২৭ লক্ষ ৭ হাজার নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় র্যাব-১৫ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মটর সাইকেল এর আরোহী রোহিঙ্গা নাজমুল হুদা এবং মোঃ শরীফকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
যার কক্সবাজার সদর থানা মামলা নম্বর : ২৬, তারিখ : ১৭/০৯/২০২০ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৭০৮/২০২০ ইংরেজি (রামু) এবং এসটি মামলা নম্বর : ১৭৪৩/২০২২ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়। মামলায় ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য্য করা হয়।
ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০ (গ) এবং ৩৮ ধারায় আসামী রোহিঙ্গা নাজমুল হুদা এবং মোঃ শরীফকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। বিচারক মামলার রায়ে আসামীদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত নগদ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার নির্দেশ দেন।
রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা মূলে দন্ডিত আসামী মোঃ শরীফকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করার মাত্র ১ বছর ৮ মাস ২৬ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ রেজাউর রহমান রেজা এ রায় সম্পর্কে বলেন, আদালতে মামলাটির সাক্ষ্য প্রমাণ, তথ্য উপাত্ত উত্থাপন করে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্র পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আদালতের এ রায়ে রাষ্ট্র পক্ষ সন্তুষ্ট। এ রায়ে মাদক কারবারীদের কাছে একটা ম্যাসেজ যাবে।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন মাদক, খুন সহ চাঞ্চল্যকর মামলা গুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।