পেনশন নীতি বৈষম্যমূলক, আমলাদের স্বার্থে নিশ্চুপ সরকার
মীর হালিম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও পাবলিক পলিসি অ্যানালিস্ট

কোটা সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ণই ভরসা

মীর হালিম: কোটা পদ্ধতি রাষ্ট্রীয় অতীব জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামাজিক ভারসাম্য সৃষ্টি করাই যার উদ্দেশ্য। রাষ্ট্র পরিচালনায় ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় সরকার সময়ের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করবে এটাও প্রত্যাশিত। এটি উপেক্ষা করার ফলেই সমাজে ব্যাপক বৈষম্য তৈরি করেছে। এই বৈষম্য কমানোর জন্যই বিভিন্ন সময়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানের সৃষ্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজ আমরাই স্বজাতির উপর বৈষম্য সৃষ্টি করছি। কোন বিশেষ শ্রেণীর প্রতি অন্যদের তুলনায় অনায্য আচরণ কে বৈষম্যমূলক আচরণ বলা যায়। যে কোনো বৈষম্য মূলক আচরণ আইনের শাসনের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। এই সামাজিক বৈষম্য দূর করে ভারসাম্য তৈরি করতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিম্নোক্ত প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় জনমত তৈরি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

১. সব ধরনের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন ধরনের কোটা পদ্ধতি থাকবে না। মেধাই হবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বশেষ কথা। চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ অবারিত হবে। এই প্রস্তাবনা আর ২০১৮ সালের কোটা পদ্ধতি বাতিলের নির্দেশনা একই কথা।‌ এই বিষয়ে আমাদের উচ্চ আদালতে এই প্রথমবার ইস্যুটি উপস্থাপিত হয়েছে। সাধারণ জনগণ একটি দূরদর্শী রায় প্রত্যাশা করে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯২ সালে ইন্দ্র শাহনি বনাম ভারত মামলায় ৫০% এর বেশি কোটা রাখাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। রায়ে আরো বলা হয়েছে যেখানে উচ্চ পর্যায়ের দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয় (যেমন ডিফেন্স সার্ভিসেস, টেকনিক্যাল পোস্ট, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রকৌশলবিদ্যা, আণবিক শক্তি চর্চা, মহাকাশ গবেষণা, ফিজিক্যাল সায়েন্সেস, প্রফেসরস ও পাইলট) সেখানে কোটা রাখা অনুমোদিত নয়। প্রশাসনিক আদেশে কোটা ব্যবস্থা রাখার বিষয় বলা হয়েছে এটি অবৈধ নয় কিন্তু যেহেতু প্রথমবার হয়েছে সেহেতু পরবর্তীতে পার্লামেন্টে আইন করে নিলে কোটা রাখার যৌক্তিকতা আদর্শিক হত। ভারতীয় অনেক মামলায় অনগ্রসর শ্রেণীকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যা আমাদের এখানে অনুপস্থিত।

২. সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি থাকতে পারে যা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর পুনঃমূল্যায়ন হবে। এই সুযোগের মাধ্যমে কোটায় সুবিধা প্রাপ্তরা প্রতিযোগিতামূলক চাকরির ক্ষেত্রে মেধা প্রমাণের যোগ্য হয়ে উঠবে। সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক অনুচ্ছেদ ২৮ (৪), ২৯ (৩) ও ৬৫ (৩), ৩ক বর্ণিত নীতি অনুযায়ী ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা রাখা যেতে পারে। ‌ এক্ষেত্রে পোষ্য কোটা বাদ দিতে হবে। ‌

৩. মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদার উন্নয়নে কোটার বিকল্প সুবিধা বৃদ্ধি করার দাবি। বিদ্যমান ভাতা বৃদ্ধি, জমি ও বাড়িঘর প্রদান, সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য শিক্ষা ভাতা বরাদ্দ, পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার সুযোগ দানসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সম্মাননা বাড়ানোর দাবি তোলাও সময়ের প্রয়োজন। দৃশ্যমান একটি সুবিধা কর্তন করার ফলে উনারা যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন তা বিকল্প উপায়ে পুষিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে স্থানীয় পর্যায়েও রাস্তাঘাট সরকারি স্থাপনা নামকরণ করেন, ওনাদের নাম ইতিহাস থেকে মুছে যাবে না। উদাহরণস্বরূপ জেলা আদালতে ন্যায়কুঞ্জ স্থাপিত হয়েছে তা একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে হতে পারে। উপজেলার যে অডিটোরিয়াম তা একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে হতে পারে! থানায় যে বিশ্রামাগার তা একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের তালিকা প্রণয়ন নিয়ে যে গলদ বা গড়বড় আছে তা দূর করে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা। প্রায় ২ লক্ষ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেওয়াটাও জাতীয় সম্পদের অপচয়। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা , মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান নাতি-নাতনিরা অনগ্রসর শ্রেণীর কিনা তা রাষ্ট্র এখনো নির্ধারণ করে নাই বিধায় অনুচ্ছেদ ২৯ এর বিধান তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কোটার সুবিধা পেলেই সবাই কম মেধাবী এটা ধারণা করাও ভুল।

আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোন কাজই বৈষম্যমূলক আচরণ, যা প্রথমত নিষিদ্ধ এবং দ্বিতীয়তঃ যার বিপক্ষে নাগরিকগণ আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। এর ব্যতিক্রম হিসেবে ‘পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশন বা এফারমেটিভ একশন’ বা বিশেষ বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুচ্ছেদ ২৮ (৪), ২৯ (৩) ও ৬৫ (৩), ৩ক যার মাধ্যমে নারী, শিশু ও অনগ্রসর অংশের অনুকুলে বিশেষ বিধিবিধান প্রণয়ন করতে পারবে যা দৃশ্যত বৈষম্যমূলক হলেও তাদের অগ্রগতির জন্য অনুমতি দেওয়া আছে। বাস্তবিক অর্থে কোটা ব্যবস্থা এরই একটি প্রতিফলন।

১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণীত হলেও এই দুই অনুচ্ছেদের অধীনে এখনো পর্যন্ত জাতীয় সংসদে কোন আইন প্রণয়ন করা হয় নাই। প্রশাসনিক বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে চালু হওয়া কোটা পদ্ধতিতে বিভিন্ন সময়ে কিছু পরিবর্তন আসে। বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে ২০১৮ সালে আন্দোলনে নামে মেধাবী শিক্ষার্থীরা। চাপে পড়ে সরকার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতি বাতিলের নির্দেশনা জারি করে। কোটা বঞ্চিতরা ওই নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করলে হাইকোর্ট বিভাগ‌ ঐ নির্দেশনা বাতিল করে দেয় এবং কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হয়। এতে করেই চাকুরী প্রার্থী ও ছাত্র সমাজের মাঝে আবারো ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, তারা ব্যাপক আন্দোলনে নামে। ২০২৪ এর এই আন্দোলন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘বাংলা ব্লকেড’ চলছে। আন্দোলনের চাপে পড়ে হাইকোর্টের রায়টি এখন আপিল বিভাগ ‘স্ট্যাটাস ক্যু’ বা যথাবস্থা বজায় রাখার জন্য ১ মাসের সাময়িক নির্দেশনা দিয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি আদালতে ঝুলন্ত আছে। পুলিশি বাধা সত্বেও কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলন চলমান আছে। ইতিমধ্যে অজ্ঞাতনামা ছাত্রদেরকে আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি মামলাও দায়ের হয়েছে। এরপরেই আন্দোলনকারীরা গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। আন্দোলনকারীদের দাবি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে একটি আইন প্রণয়ন করা হলেই তারা ঘরে ফিরে যাবে। যে আইনে মেধাবীদের জন্য অধিক সুযোগ এবং সর্ব পর্যায়ে কোটা পদ্ধতি কমানোর কথা থাকবে।

সংস্কারের এখতিয়ার নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ নাকি আইন সভার?

আইনবিজ্ঞান ও আমাদের সংবিধান অনুচ্ছেদ ৮০ অনুসারে প্রাথমিক আইন প্রণয়নের সকল ক্ষমতা ও দায়িত্ব আইনসভা বা জাতীয় সংসদের। আইন সভা যদি কোন ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের কাছে ডেলিগেট বা অর্পণ করে তখন নির্বাহী বিভাগ সেকেন্ডারি বিধি-বিধান প্রণয়ন করতে পারে। বিচার বিভাগের প্রথমত ন্যায় অন্যায় নির্ধারণ করা দ্বিতীয়ত সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতা অনুসারে কোন আইন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হলে সেই টুকুকে অসংবিধানের ঘোষণা করা ও সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় আদেশ ও‌ নির্দেশনা জারি করতে পারে।

এখন প্রশ্ন হল, এই কোটা পদ্ধতি নির্ধারণ করার জন্য উপযুক্ত কে? কার এখতিয়ার সংবিধান সম্মত।‌ প্রথমত নির্বাহী বিভাগ কিংবা বিচার বিভাগ প্রাথমিক উপযুক্ততায় নাই। এই পর্যন্ত কোটা পদ্ধতি নিয়ে যেই নির্দেশনা ছিল সবই নির্বাহী বিভাগ থেকে এসেছে এবং আইন বিজ্ঞান অনুসারে এগুলি ইরেগুলার (অনিয়মিত) আইন প্রণয়ন হয়েছে। এই বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য উপযুক্ত ক্ষমতা প্রাপ্ত হচ্ছে আইনসভা বা জাতীয় সংসদ। অনুচ্ছেদ ২৮ (৪), ২৯ (৩) ও ৬৫ (৩), ৩ক অনুসারে জাতীয় সংসদেরই একমাত্র আইন প্রণয়নের এখতিয়ার আছে। অনুচ্ছেদ ১০৪ এর আওতায় আপিল বিভাগকে ‘কম্পলিট জাসটিজ’ বা সম্পূর্ণ ন্যায় বিচারের জন্য একটি বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে যা অনুসরণ করে আপিল বিভাগ ‘জুডিশিয়াল রিভিউ’ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারেন। ১০৪ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিশেষ ক্ষমতা সংসদে আইন প্রণয়নের বিকল্প নয়। তাই বলা যায় সংসদই যে কোন বিষয়ে বা আলোচ্য বিষয়ে আইন করার উপযুক্ত এখতিয়ার রাখে। সুতরাং বিচার বিভাগ কোটা নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ক্ষমতা প্রাপ্ত এই প্রশ্নে উত্তীর্ণ হবে না। সাংবিধানের রক্ষক হিসেবে আপিল বিভাগ অবিটার ডিকটা বা অবজারভেশন দিতে পারে যা অনুসরণ করে মহান জাতীয় সংসদ একটি আইন প্রণয়ন করতে পারে। নির্বাহী বিভাগের আদেশ হাইকোর্ট বিভাগ বাতিল করে রায় দিয়েছে। আপিল বিভাগ সেই রায় বহাল বা বাতিল বা নির্দেশনা জারি করতে পারলেও সংবিধান আইনসভাকে প্রাথমিক আইন প্রণয়নের এখতিয়ার দিয়েছে।

উচ্চ আদালত যখন আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের ঐতিহ্যগত ভূমিকাকে অতিক্রম করে এমনভাবে রায় প্রদান করে যা সংসদে পরিণত আইনের মতোই তখন তাকে “জুডিশিয়াল লেজিসলেশন” বলা হয় যা আইনবিজ্ঞান সম্মত নয়। কারণ আইন প্রণয়নের ক্ষমতা শুধুমাত্র জাতীয় সংসদের হাতেই ন্যস্ত রয়েছে। ‌

শ্রেণী স্বার্থ না জনস্বার্থ কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? সমাজ বিজ্ঞানে শ্রেণী স্বার্থের তুলনায় জনস্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলে। ‘পলিটিকাল উইল বা রাজনৈতিক সদিচ্ছা’ সমাজে ভারসাম্য তৈরি করার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আইন সভার মাধ্যমে সেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা বাস্তবায়ন করা জরুরী। কোটা সংস্কার সময়ের প্রয়োজন! সরকারি চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কোটা, পোষ্য কোটা সহ বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রায় ২৫৮ ধরণের কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। তাই অতীত বিশ্লেষণ, ভবিষ্যৎ অনুমান ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের মহান জাতীয় সংসদে একটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমেই এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কার হোক।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি কোটা সংস্কারের প্রতি ইতিবাচক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও ২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছিল।‌ সমস্যাটা ঝুলে আছে আদালতের কাঁধে! বিজ্ঞ বিচারপতিগণ ন্যায় বা অন্যায়ের মানদণ্ড নির্ধারণ করুক, ন্যায় বিচার করুক, পাবলিক পলিসি নির্ধারণ কিংবা আইন প্রণয়নের বিষয়টা সংসদের কাছেই থাকুক। জাতীয় সংসদে বিতর্ক হোক, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের কোটা ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে। বাংলাদেশেও হয়তো এর প্রয়োজনীয়তা আছে, লেভেল অনুধাবন করে কোটা ব্যবস্থা সীমিত ক্ষেত্রে চালু রাখা হোক। ‌

কোটা ব্যবস্থার কারণে মেধাবী ও যোগ্য চাকরি প্রত্যাশীরা অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের মেধা জাতীয় সম্পদে পরিণত না হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ১৯৭২ সালের কোটা ব্যবস্থা সংস্কার হয়ে ২০২৪ এ সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৫% বা ৫৬% কোটা থেকে এবং অবশিষ্ট ৪৫% আসে সাধারণ মেধা থেকে।

১. সাধারণ মেধা কোটা ২০% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৪৫%।
২. জেলা কোটা ৪০% থেকে কমে এখন ১০%।
৩. নারী কোটা ১০% ছিল এবং আছে।
৪. মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০% ছিল এবং আছে। যার পরিধি জীবিত মুক্তিযোদ্ধা পেরিয়ে মৃতের সন্তান কিংবা নাতি নাতনিকে আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
৫. ১৯৮৫ থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫% কোটা আছে।
৬. এই কোটার মধ্যে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে প্রতিবন্ধীদের জন্য ১% কোটার বিশেষ বিধান আছে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শোষণমুক্ত সমাজে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার তাগিদে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্য নিরসনে আমাদের মহান জাতীয় সংসদে একটি আইন প্রণয়ন করা হোক। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮ (৪) ও ২৯ (৩) কোটা রাখার বাধ্যবাধকতা তৈরি করে না বরং প্রয়োজনে কোটা সংরক্ষণের জন্য আইন প্রণয়ন করার অনুমোদন দেয়।

লেখক: মীর হালিম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও পাবলিক পলিসি অ্যানালিস্ট।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম -এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম কর্তৃপক্ষের নয়।