মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : দুটি পৃথক হত্যা মামলায় ৪ জন আসামীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। একইসাথে প্রত্যেককে ২ লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মোঃ মোশারফ হোসেন মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এ রায় ঘোষণা করেন।
প্রথম মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ৩ আসামী হলেন- কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের তিতামাঝির পাড়ার হাজী লাল মিয়ার পুত্র আবদুল মোনাফ, একই এলাকার হংস মিয়াজির পাড়ার মৃত সহর মুল্লুকের পুত্র করিমদাদ এবং মাইজপাড়ার মাইজ্যা মিয়ার পুত্র শামসুল আলম।
এ মামলায় ২ জন আসামী যথাক্রমে আপন ভাই হত্যাকারী সুলতান আহমদের পুত্র জালাল আহমদ ও হাজী লাল মিয়ার পুত্র আবদুল মালেক মৃত্যুবরণ করায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামী হলেন- কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ঘোনার পাড়ার সিরাজুল হকের পুত্র শেরে ফরহাদ।
উভয় মামলার মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ৪ জন আসামী রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী প্রনব কান্তি শর্মা এ তথ্য জানিয়েছেন। রাষ্ট্র পক্ষে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শওকত বেলাল মামলাটি পরিচালনা করেন।
প্রথম মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
১৯৯৪ সালের ৪ মার্চ বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের তিতা মাঝির পাড়ার সুলতান আহমদের পুত্র রকবত আলীকে তার আপন ভাই জালাল আহমদের নেতৃত্ব মগডেইল বাজার হতে বাড়ি ফেরার পথে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় সুকৌশলে অন্যতম হত্যাকারী, নিহতের ভাই জালাল আহমদ বাদী হয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মহেশখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে রকবত আলীর স্ত্রী জবারু বেগম একই ঘটনায় আগের মামলার বাদী জালাল আহমদকে সহ অন্যান্যদের আসামী করে মহেশখালী উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করলে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট সে মামলাটিও পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
পরে দুটি মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি চার্জসীট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয় এবং আদালত চার্জসীট (অভিযোগপত্র) টি গ্রহন করেন। তদন্ত কার্যে অসংগতি থাকায় এ চার্জশীট (অভিযোগপত্র) টি গ্রহণের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিহত রকবত আলীর স্ত্রী জবারু বেগম রিভিশন (আপীল) মামলা দায়ের করলে আদালত মামলাটি অধিকতর পূণ তদন্তের আদেশ দিয়ে মহেশখালী উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট মামলাটি প্রেরণ করেন।
উচ্চ আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে মহেশখালী উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম সিআইডি’র নিকট প্রেরণ করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে চট্টগ্রাম সিআইডি’র পরিদর্শক এস.করিম গণি বাদী হয়ে হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার প্রায় ৯ বছর পর ২০০২ সালের ১৬ জানুয়ারী আবদুল মোনাফ, করিমদাদ, শামসুল আলম, নিহতের আপন ভাই জালাল আহমদ ও আবদুল মালেককে আসামী করে একই ঘটনায় তৃতীয়বারের মতো মহেশখালী থানায় আরো একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মহেশখালী থানা মামলা নম্বর ০৮, তারিখ : ১৬/০১/২০০২ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ০৮/২০০২ ইংরেজি (মহেশখালী) এবং এসটি মামলা নম্বর : ২০৫/২০০৩ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
এ মামলায় ২০০৩ সালের ২৯ নভেম্বর চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে মামলাটির বিচারকার্য শুরু করা হয়। মামলায় ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে তাদের জেরা, নিহতের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা, আলামত প্রদর্শন, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়।
রায় ঘোষণার দিনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মোঃ মোশারফ হোসেন আসামীদের মধ্যে আবদুল মোনাফ, করিমদাদ ও শামসুল আলমকে দোষী সাব্যস্থ করে প্রত্যকেকে মৃত্যুদন্ড এবং একইসাথে প্রত্যেককে ২ লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড প্রদানের রায় ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, আপন ভাই হত্যাকারী জালাল আহমদ ও আবদুল মালেক মৃত্যুবরণ করায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হত্যাকান্ডটি সংগঠিত হওয়ার দীর্ঘ ৩০ বছর পর মামলাটি রায় ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, একই আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শওকত বেলাল।
দ্বিতীয় মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
১৯৯৫ সালের ২০ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের মামুন মিয়ার বাজারে বেবীট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ঘোনারপাড়ার সিরাজুল হকের পুত্র শেরে ফরহাদ তার আপন চাচাতো ভাই ডা. আবুল কাসেমের পুত্র বেবীট্যাক্সি চালক খুরশিদ আলম প্রকাশ বাবুলকে উপুর্যপুরি ছোরার আঘাতে হত্যা করে।
এই ঘটনায় নিহত খুরশিদ আলম প্রকাশ বাবুলের পিতা ডা. আবুল কাসেম বাদী হয়ে রামু থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার রামু থানা মামলা নম্বর ০৮, তারিখ : ২০/১২/১৯৯৫ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ১৪৯/১৯৯৫ ইংরেজি (রামু) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৪২/২০০০ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
মামলায় হত্যাকারী শেরে ফরহাদ ও তার পিতা সিরাজুল হককে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জসীট (অভিযোগপত্র) প্রদান করা হয়। এ মামলায় ২০০২ সালের ৮ আগস্ট চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে মামলাটির বিচারকার্য শুরু করা হয়।
মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে তাদের জেরা, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা, আলামত প্রদর্শন, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ সকল বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়।
রায় ঘোষণার দিনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মোঃ মোশারফ হোসেন আপন চাচাতো ভাই হত্যাকারী আসামী শেরে ফরহাদকে দোষী সাব্যস্থ করে মৃত্যুদন্ড এবং একইসাথে ২ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড প্রদানের রায় ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, দন্ডিত আসামী শেরে ফরহাদ এর পিতা সিরাজুল হক মৃত্যুবরণ করায় তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হত্যাকান্ডটি সংগঠিত হওয়ার দীর্ঘ ২৯ বছর পর মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, একই আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শওকত বেলাল।