চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে হামলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিহত
নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম

অ্যাড. আলিফ হত্যা: চিন্ময়ের কৌঁসুলিসহ আসামি অর্ধশতাধিক আইনজীবী

চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের আগে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেছেন নিহত সাইফুলের ভাই খান এ আলম।

গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা এই মামলায় ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আইনজীবীদের গাড়ি ও আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া সাইফুলের ভাইয়ের মামলায় আসামি করা হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর আইনজীবী শুভাশীষ শর্মাকে। এছাড়া এই মামলার এজাহারে নাম থাকা আসামিদের তালিকায় ৭০ জন আইনজীবী রয়েছেন বলে জানা গেছে।

আলিফের ভাইয়ের মামলার এজাহারে দেখা যায়, আসামিদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র আইনজীবী ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি চন্দন কুমার তালুকদার, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নিখিল কুমার নাথ, চট্টগ্রামের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী নিতাই প্রসাদ ঘোষ, আইনজীবী চন্দন দাশ, সুমন আচার্য, রুবেল পাল, অভিজিৎ ঘোষ, তপন কুমার দাশ, অভিজিৎ আচার্য, অশোক দাশ, রাজেশ পাল ও আশীর্বাদ কুমার বিশ্বাসসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী।

এছাড়া অ্যাডভোকেট ক্লার্ক সমিতির নেতাদেরও আদালত ভবন এলাকায় ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় আসামি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আইন পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৭০ জনের বেশি ব্যক্তি মামলায় আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২৬ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে তার অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করে।

আরও পড়ুনএকুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক-বাবরসহ সব আসামি খালাস

পরে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই সময় আসামিরা আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ২০ থেকে ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী নিখিল কুমার নাথ বলেন, ‘সাইফুল আমাদের সহকর্মী ও ভাই। তাকে যারা হত্যা করেছে, অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে। কিন্তু ১১৬ আসামির মধ্যে ৭০ জনের মতো আইনজীবী রয়েছেন। তারা সবাই সনাতনী আইনজীবীদের সংগঠন ‘আইনজীবী বিজয়া সম্মিলন পরিষদ’-এর সদস্য। ঘটনার দিন হামলা কিংবা গাড়ি ভাঙচুরে আইনজীবীদের কেউ জড়িত ছিলেন না দাবি এই আইনজীবীর।

অবশ্য মামলার বাদী নিহত আইনজীবী সাইফুলের ভাই খান এ আলম বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়া থেকে। কিছু আইনজীবী ওই সময়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লোকজন জড়ো করেছেন। তারা উসকানিমূলক স্লোগান দিয়েছেন। এরপর সশস্ত্র লোকজন জড়ো হয়ে আদালতের অদূরে তার ভাইকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে। এজন্যই তিনি মামলাটি করেছেন।

হত্যাকাণ্ডের এতদিন পর মামলা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ভাইকে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তারা হতাশ ছিলেন। দাফন-কাফন ও পারিবারিক শোক কাটিয়ে উঠতে সময় লাগায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।

তিনি বলেন, আদালতে উত্তেজনা সৃষ্টির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আমার ভাই খুন হয়েছে। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের ফাঁস চাই এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। আসামি ধরার বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম জানিয়েছেন, আসামিদের নানাভাবে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ২৬ নভেম্বর আদালতে তোলা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ওই ঘটনার জেরে ওইদিন আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে স্থানীয় রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।