সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে ২৭ লাখ টাকা জরিমানা
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার (ফাইল ছবি)

৯৩তম জন্মবার্ষিকীতে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন স্যারকে শুভেচ্ছা

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার স্যারের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। লেখার শুরুতে তাই স্যারকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি।

তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার নয়াবাড়ি গ্রামে ১৯৩১ সালের আজকের দিনে (১লা ডিসেম্বর) জন্মগ্রহণ করেন আইন অঙ্গনের এই জীবন্ত কিংবদন্তী। তার পিতা মৌলভী মুহম্মদ আজিজ বক্স একজন জোতদার ছিলেন।

জমির উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ অনার্স, এমএ ও পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশ করেন। পরে লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিষ্টার-এট-ল সনদ লাভ করেন।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্ট থেকে সনদ নিয়ে ২৭ মে ১৯৬০ সালে আইন পেশায় যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে সংবিধান, দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইন বিশেষজ্ঞ।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৪৫ সালে ছাত্র থাকা অবস্থায় তৎকালীন ছাত্র ফেডারেশনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। পরে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন ও ন্যাপের সমর্থক ছিলেন। তিনি আওয়ামী মুসলিমের লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও মাওলানা ভাসানীর সহচর।

আইন পেশায় সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তাকে পাঁচবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান।

দল গঠনের প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাগদল গঠন করলে তিনি তাতে যোগ দেন। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল বা জাগদলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। পরে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য হন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

তিনি ১৯৭১ সালে হাইকোর্টে আইনজীবীদের যে গ্রুপটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের একজন।

রাষ্ট্রপতি

তিনি বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পদত্যাগ করার পর নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত ২১ জুন ২০০২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ সাল পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মন্ত্রী

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভায় ৬ এপ্রিল ১৯৮১ থেকে ২৭ নভেম্বর ১৯৮১ সাল পর্যন্ত গণপূর্ত ও নগর উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বর্তমান সংসদ ভবনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন তিনি।

দেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভায় তিনি ২৭ নভেম্বর ১৯৮১ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদে খালেদা জিয়ার প্রথম মন্ত্রীসভায় ২০ মার্চ ১৯৯১ থেকে ২৮ আগস্ট ১৯৯১ পর্যন্ত ভূমিপ্রতিমন্ত্রী ও ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ থেকে ১৯ মার্চ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে গঠিত স্বল্পকালীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রীসভায় তিনি ১৯ মার্চ ১৯৯৬ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্পীকার

অষ্টম জাতীয় সংসদে ২৮ অক্টোবর ২০০১ থেকে ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সংসদ সদস্য

১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন দিনাজপুর-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৯ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ, ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদের বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

অসামান্য কৃতিত্বের জীবন

আজ থেকে ৯৩ বৎসর পূর্বে উত্তরবঙ্গের একটি গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে এসে পড়াশুনা, অনেক দূরহ ও কষ্টের, এখন পর্যন্ত ৮—১০ ঘন্টা সময় লাগে ঢাকা আসতে তদুপরি প্রবল আগ্রহে সাহিত্য চর্চা, রাজনীতি, ওকালতি, কে জানত, তিনিই হবেন মন্ত্রী, স্পীকার বা সাবেক রাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী), ১৯৭৭ সাল হতে জাগদল তথা অদ্যাবধি রাজনীতিতে অনবদ্য। তেমনি করে আইন পেশায় কেটে গেলো ৬৪ বছর।

মৃদু হাসি, স্পষ্টভাষী, বিনয়ী, প্রায় সময়ই নিশ্চুপ বা গভীর চিন্তায় মগ্ন। বিজ্ঞ সিনিয়রের সময় কাঁটে পড়াশুনা, অধ্যাপনা এবং মানুষের পরোপকার বা জনহীতকর কাজে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠা এবং ঠিক সময়ে ঘুমানো চিরাচরিত অভ্যাস। সকাল ৯টা থেকে ৫টা প্রিয় অঙ্গন সুপ্রীম কোর্টের বার এর কাজকর্ম সঠিক নিয়মানুবর্তিতা।

হয়তো স্যারের নানুর দোয়া জজ, ব্যারিস্টার কালেক্টর ভাগ্যে না থাকলে হয় না। তবে স্যারের চেষ্টাটা ও ছিল অনেক বড়, বিশ্ব ভ্রমন ১৮টি প্রকাশিত বই পড়লে জানা যায় স্যারের শিক্ষার ও জ্ঞানের গভীরতা। অপেক্ষায় রইলাম স্যারের আত্মজীবনী যা প্রকাশিতব্য।

স্যারের, বিখ্যাত একটি বই “সুরাইয়া ফারাহ চৌধুরী”। উক্ত বইতে ভালো আইনজীবীর পরামর্শ পাওয়া যায়। যা বর্ণায়িত “It is through knowledge of law, application of mind, hard labour, marshalling of facts and with full confidence to appear before the court, reading the psychology of the Judge that is necessary to make yourself a good Barrister.”

তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতি ও নিজস্ব অভিমত

বাবা আইনজীবী হিসেবে ১৯৮৭ সালে ২১৯ নং রুম (সাবেক ৪১) প্রথম স্যারকে দেখি, আপাদমস্তক ভদ্রলোক। অদ্যবধি তাই, মনে আছে মধুর স্মৃতি। আমাকে দেখে স্যার প্রয়াত রুহুল আমীন চাচার উদ্দেশে বললেন, “Bring him to the canteen & provide him sandwich.”

দূর থেকে না হলেও কাছ থেকে স্যারকে দেখে বুঝা যায়, জীবনটা আনন্দের হাসি খুশী আনন্দের। শতায়ু পরম করুনাময়ের দয়া। স্যার সর্বদা কৃতজ্ঞ। সবচাইতে আকর্ষণীয় বিষয় Sharpen photographic memories অন্যতম, কারণ স্যার নোট করে লিখেন।

রাগ স্যারকে বিরাগী করেনা। হয়তো গাউন ঝেড়ে রাগ তারেন। জুনিয়র বান্ধব, জুনিয়রদের সর্বদা উৎসাহ দেন। সুপ্রীম কোর্টের মেইন গেট থেকে উপর পর্যন্ত সবার খবর রাখেন। কেউ অসুস্থ বা মৃত্যু সংবাদ বিবাহত্তোর সংবর্ধনা স্যার সহজে অনুপস্থিত থাকেন না।

৯৩ বৎসর এর বর্ণাঢ্য জীবনও স্যারকে কোনরূপ অহংকার বা দাম্ভিকতার মোহে আকর্ষিত করেনা। ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি, বিশ্ব পরিস্থিতি, আত্মজীবনী, প্রতিদিন কোন না কোন বই এক বসায় শেষ। মহা মূল্যবান বই স্যারের নিত্য সঙ্গী।

শুভ হোক স্যার, আপনার জন্মদিন। ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন। 27 DLR P-177 Mohshin Sharif VS The State 27 (AD) P-16 এই মামলা বিখ্যাত এবং আলোচিত নির্বতনমূলক আটকের বর্বর চিত্র। Chief Justice Badrul Haider Chowdhury তাঁর “The long Echoes” বইতে লিখেছেন “Shahjahan was never found again. He was vanished in the air.”

এই বিখ্যাত মামলার বর্ণনা এসেছে “Era of Sheikh Mujibor Rahman” প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ স্যারের লেখা বইতেও। ইতিহাসের চাকা ঘোরে। শাহজাহানকে পাওয়া যায়নি। অদ্যাবধি অনেক শাহজাহান হয়তো নিখোঁজ।

সম্পাদনা: মোহাম্মদ শহিদউল্লাহ (মুন্না); অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। Email: munna1942@yahoo.com