অ্যাড. আলিফ হত্যা: চিন্ময় কৃষ্ণকে আসামি করার দাবি আইনজীবীদের

অ্যাড. আলিফ হত্যা: চিন্ময় কৃষ্ণকে আসামি করার দাবি আইনজীবীদের

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে আসামি করার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

রোববার (১ ডিসেম্বর) শোক মিছিল শেষে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে এ দাবি জানান।

জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত শোক মিছিল আদালতের দোয়েল ভবন চত্বর হতে শুরু হয়ে নগরের লালদীঘি মোড়, কোতোয়ালি থানা মোড়, নিউমার্কেট মোড়, আমতল মোড়, সিনেমা প্যালেস মোড় হয়ে আবার দোয়েল চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন আইনজীবীরা।

এদিকে টানা দুই দিন বন্ধ থাকার পর রোববার সকাল থেকে আদালতের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত আদালতে বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতি ছিল। আজ সোমবার থেকে অবকাশকালীন ছুটিতে বন্ধ থাকবে আদালতের কার্যক্রম। তবে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম চলবে।

গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তাঁর অনুসারীরা। তাঁরা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন।

আরও পড়ুনঅ্যাড. আলিফ হত্যা: চিন্ময়ের কৌঁসুলিসহ আসামি অর্ধশতাধিক আইনজীবী

পরে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় আইনজীবীদের গাড়ি ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে মিছিল বের করেন কিছু আইনজীবী।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মিছিল শেষে ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান সাইফুল। তখন তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।

পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও চারটি মামলা হয়। তিনটি করে পুলিশ, আরেকটি করে নিহত ব্যক্তির ভাই জানে আলম। পাঁচ মামলায় গ্রেপ্তার হন ৩৯ জন। এর মধ্যে হত্যায় জড়িত ৯ জন রয়েছেন।

পুলিশ বলছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব। তাঁর নিথর দেহ পড়ে থাকলেও লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন অন্যরা। সেখানে আরও ছিলেন ২৫-৩০ জন। তাঁদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী। একজন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

চিন্ময়কে আসামি করার দাবি

শোক মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সাইফুল হত্যাসহ আদালত প্রাঙ্গণে পর্যায়ক্রমে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার প্রতিটি মামলায় চিন্ময় দাসকে আসামি করতে হবে।’

পুলিশকে দোষারোপ করে আইনজীবী সমিতির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘আমি সব সময় বলে এসেছি, এ ঘটনার জন্য পুলিশ দায়ী। আমরা চট্টগ্রামে অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে আনতে দেখেছি। পুলিশ তাদের সমর্থকদের কাছে ভিড়তে দেয়নি। কিন্তু চিন্ময় দাসকে যখন প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়, তখন তাঁর সমর্থকেরা গাড়ি আটকে রেখেছিল। আমরা দেখেছি, চিন্ময় দাস পুলিশের মাইক ব্যবহার করেছেন। তিনি মাইক ব্যবহার করে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর ওই বক্তব্যের পর পর্যায়ক্রমে ভাঙচুর ও সন্ত্রাসের সূত্রপাত। এরপর সাইফুলকে হত্যা করা হয়।’

আইনজীবী হত্যায় দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার দাবি জানিয়ে আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী-সাক্ষী রয়েছেন। আমি পুলিশকে অনুরোধ করব, এই মামলার অভিযোগপত্র দিতে দেরি হওয়ার কথা নয়। যারা গ্রেপ্তার হয়নি, তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনুন। আমরা আমাদের প্রিয় ভাই সাইফুল হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না।’

আরও পড়ুনসব বিচারপতিকে নিয়ে বিশেষ সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের সভাপতি আবদুস সাত্তার, যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল আলম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক কাশেম কামাল প্রমুখ।

এদিকে আইনজীবী হত্যার পর গত বুধ ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ৭৪টি আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রোববার শুরু হয় কার্যক্রম। এ কারণে আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। এমনকি সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল উপস্থিতি।

সরেজমিন দেখা যায়, আদালতের বারান্দা ও এজলাসে বিচারপ্রার্থীদের ভিড়। ফটিকছড়ি থেকে আসা নুরুল আমিন জানান, গত বৃহস্পতিবার তাঁর মামলার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সেদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শুনানি হয়নি। পরবর্তী তারিখ জানার জন্য তিনি এসেছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, টানা দুই দিন এর সঙ্গে সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় রোববার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেও চাপ একটু বেশি। সোমবার (৩ ডিসেম্বর) থেকে অবকাশকালীন ছুটিতে আদালত বন্ধ থাকবে।