সংবিধান সংস্কার এর প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিক বাস্তবতা

আদালত প্রাঙ্গণে অস্থিরতা! দায় কার?

মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম: আদালত প্রাঙ্গণ হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে। এর পিছনে কারণ কি? কারা জড়িত, কার স্বার্থে এমনটা হচ্ছে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। বিচার সংশ্লিষ্টরা ও এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতসহ দেশের বিভিন্ন জেলা আদালত গুলোতে কেন জানি একটা পক্ষ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে।অতি সম্প্রতি চট্রগাম, নওগাঁ, কক্সবাজার, বরগুণা (পাথরঘাটা), কুষ্টিয়া, মুন্সগঞ্জ জেলায় বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে, প্রধানত এর দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথম কারণ হলো বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৭ বছরে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাও মিথ্যা ও হয়রানিকর মামলা। অতঃপর জুলুম নির্যাতনে অতিষ্ঠ বিচার প্রার্থী ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা আদালত থেকে এই সরকারের আমলেই দ্রুত নিষ্কৃতি পেতে চাই।সেজন্য মরিয়া হয়ে লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা আদালতে প্রতিকার পেতে দেরী হওয়ায় বিশৃঙ্খলা করতে পারে বা চেষ্টা করছে।অনেকে আবার মামলাজটকে দায় করছে অর্থ্যাৎ মামলা নিস্পত্তিতে অত্যাধিক দেরী হওয়া যার ফলে আদালতের বিদ্যমান স্বাভাবিক আইনী প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না বা চাচ্ছে না।

বিগত শাসনামলে যারা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে ছিলেন তাদের অনেকে শতাধিক মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরেছেন আদালতের দ্বারে দ্বারে। এমনকি অনেক নেতাকে মামলার ভারে আদালতে প্রায় প্রতিদিনই হাজিরা দিতে হয়েছিল।বর্তমান সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় দাখিল হওয়া মামলা এখনও সব প্রত্যাহারের ঢালাও আদেশ করেনি। ফলে আদালত থেকে মুক্তি পেতে বেপরোয়া হয়ে কেউ কেউ আদালত প্রাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয় কারণ হলো বিগত পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার সমর্থক নেতা কর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের সকলে কিন্তু এদেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। তারা এদেশে থেকে বিভিন্ন ভার্সনে দেশকে অস্থির করার চেষ্টা করছে।

ধরা যাক কিছু দিন পরপর আনসার, রিকশা, ইসকনসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে দেশকে ও সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। আদালত যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা তাই এই পবিত্র অঙ্গনকে বাছাই করে সেখানেও বিশৃঙ্খলা করছে একটা বিশেষ গোষ্ঠী। যারা যে কোন মূল্যে পলাতক ও ফ্যাসিস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই। এরপরে যে কারণটি হলো পেশাজীবী আইনজীবীদের আধিপত্য বিস্তার ও প্রভাব খাটিয়ে এবং ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে আদালত থেকে অনায্য প্রতিকার আদায় করার চেষ্টা।

ধরুন ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আস্থাভাজন আইনজীবীরা এখন মাঠে বা আদালতে নেই। তাদের অনেকের জমজমাট প্রাকটিস ছিলো। যেমন ব্যারিষ্টার সুমনের কথাই বলি। তিনি ফেসবুকে লাইভ ভিডিও করে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। কেননা ব্যারিষ্টার সুমন নিজ এলাকায় বিভিন্ন লোকদেখানো কর্মকাণ্ড করে সারাদেশে হঠাৎ সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করে।আইনজীবী হিসেবে ও পরিচিতি লাভ করেন।যে কোন সমস্যা হলে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তার কাছে প্রতিকার লাভের আশায় যেত । ঠিক সেরকমই বর্তমান সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা রাজনৈতিক দলের আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সরকারি ও রাজনৈতিক পদ-পদবি পেতে বা লাইম লাইটে আসতে চাই। তাই তারা বিভিন্ন অপকর্ম ও বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।দলের হাইকমান্ডের কাছে পরিচিতি লাভ ও কারো কারো উদ্দেশ্য।বিগত বছরগুলোতে পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পেশাজীবী আইনজীবী যারা আদালত প্রাঙ্গনে অপকর্ম (আদালতের দরজায় লাথি মারা, মারপিটে অংশগ্রহণ) করে পদ-পদবী লাভে সমর্থ হন। এমনকি বিচারপতি হয়েছেন কেউ কেউ।ঠিক এখনও একপক্ষের আইনজীবীরা বিভিন্ন অপকর্ম করার চেষ্টা করছে।

আদালত হচ্ছে মানুষের সর্বশেষ ভরসার আশ্রয় স্থল। যেখানে মানুষ নিতান্তই ঠেকে না পড়লে কেউ যায় না। বিচার বিভাগ আইনী কাঠামোতে চলে। আইনজীবীগণ আদালতে আইন-কানুন ও বিধি বিধানের অধীনে থেকে মামলা পরিচালনার জন্য মক্কেলের পক্ষে নিয়োজিত হন। কিন্তু অতীতে রাজনৈতিক সরকার আদালতকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দমন করবার হাতিয়ার হিসেবে বিচারক, আইনজীবী সবাইকে ব্যবহার করছে। বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীন না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে।পতিত সরকার তথা আওয়ামিলীগ যেটা করছে বিগত শাসনামলে বর্তমানে যাঁরা ক্ষমতায় আসছে বা আসবে তারাও একই কাজ করতে চাইবে। কারণ বিচার বিভাগ শক্তিশালী হলে বিচারক হয়তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহৃত না ও হতে পারে। বিচারক বদলী, পদায়ন ক্ষমতা যদি সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয়ের মাধ্যমে ঘটে তাহলে ইচ্ছেমতো বিচারকদের দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে কোন আদেশ না ও হতে পারে। ফলে যতই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা উঠুক না কেন কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা সময় বলে দিবে সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুধু বিচার বিভাগ নয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ কেউ ঠিক মতো গড়ে ওঠেনি বা উঠতে দেয়া হয়নি। শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে সেই ভূত ঝাড়াবে কে? আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আরও ভয়াবহ।

অতীতে অধস্থন আদালতে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আমরা জানি যে, আদালতে বাদী ও বিবাদীপক্ষের আইনজবীদের মধ্যে হট্টগোলের কথা ।গত ২৮ নভেম্বর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া আদালতে দুই পক্ষের দফায় দফায় হট্টগোল-মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে আদালতের দুই কর্মচারী আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এই ঘটনায় এক ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। আদালতের সেরেস্তাদার ও কর্মচারীদের সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে এক ব্যক্তির কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে ওই ব্যক্তি বেশ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে কর্মচারীদের ওপর হামলা করে। এতে রাকিব ও রাসেল নামে দুইজন কর্মচারী আহত হয়।

গত ২১ অক্টোবর ‘২৪ বরগুনার পাথরঘাটায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম শরিয়াত উল্লাহ এর বিরুদ্ধে শহরে ঝাড়ু মিছিল ও সমাবেশ করে পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।অভিযোগ হচ্ছে দিনের আলোতে প্রকাশ্যে বিএনপির নেতা কর্মীদের উপর হামলার ঘটনার মামলায় আ’লীগের নেতার জামিন দিয়েছে পাথরঘাটার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং মিছিলে আরও দাবী করা হয় যে, বিচারক আ’লীগের পক্ষ নিয়ে আসামিকে জামিন দেওয়ায় তার অপসারণ ও বিচার দাবি করেন।আসামীর জামিন দেওয়ার এখতিয়ার বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এর সহজাত ক্ষমতা এবং তা বিচক্ষণতার সাথে প্রয়োগ করে থাকেন বলে জানি।শূধু জামিন দেওয়ার কারণে বিচারকের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক দলের মিছিল মিটিং করা আদৌ সমীচীন নয়।

অতি সম্প্রতি তিন কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ ও চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণী জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন না হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যা ঘটল, তা অবিশ্বাস্য। এর আগে ছাত্ররা আগাম ঘোষণা দিয়ে পালন করলেন ‘সুপার সানডে’ ও ‘মেগা মানডে’। কর্মসূচির নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গেল সবকিছু শেষ হওয়ার পর। আর চট্টগামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ঘটনায় যে ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে, সেটা ছিল অপ্রতুল। এ কারণে চিন্ময় অনুসারীরা একজন আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করতে পারল।সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৮ নভেম্বর।

গত ১৪ অক্টোবর ২৪ চট্টগ্রাম নগরের জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে ইসলামী ভাবধারার সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত।সেদিন দুজনের জামিন এবং রিমান্ড আবেদন শুনানির দিন ধার্য ছিল।এদিন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে আসামিপক্ষ এবং বাদীপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আদালতের বিচারক মো. অলি উল্লাহ এজলাস ত্যাগ করেন।সূত্রঃ ঢাকা পোস্ট, ১৫ অক্টোবর।

কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের উদ্দেশে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনা এই প্রথম।বুধবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে (বিজয় ৭১ ভবনের ৩২ নম্বর আদালত) যা ঘটেছে, তা অবিশ্বাস্য। ০৮ বছর আগে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ–সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনীর মামলার রায়ে তিন বিচারকের একজন ছিলেন বিচারপতি আশরাফুল কামাল। আর এ রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ নিয়ে কটু মন্তব্য করেছেন—এমন অভিযোগ করে কয়েকজন আইনজীবী প্রথমে তাঁর উদ্দেশে কিছু মন্তব্য করেন। এরপর একজন আইনজীবী তাঁর দিকে ডিম ছুড়ে মারেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে ছুড়ে মারা ডিম বিচারপতির গায়ে লাগেনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হইচই, হট্টগোলের মধ্যে বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলাম এজলাস ত্যাগ করেন। উচ্চ আদালত হচ্ছেন মানুষের শেষ ভরসা। আওয়ামী লীগ আমলে বিচারব্যবস্থার ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আটকে রাখা যায়নি, তার অন্যতম কারণ উচ্চ আদালতের ন্যায়বিচার।

মামলা নিষ্পত্তিতে ধীরগতি তথা মামলাজটের কারণে বিচার প্রার্থীদের মাঝে ক্ষোভ প্রকাশিত হচ্ছে আদালত প্রাঙ্গণে।যেসব প্রকারের মামলা-মোকদ্দমা ০১/০২ বছরে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা বা উচিত, সে মামলা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১০/১৫ বছরেও নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালের মামলায় আইনে বলা আছে ০৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির কথা। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালের মামলা আরম্ভ হয় ২০১২/২০১৩ সালে সে হিসেবে ১০ বছরের অধিক সময় পার হলেও এখনো ২৫ ভাগ মামলা নিষ্পত্তি হয়নি।কোন কোন আদালতে পেশকার, সেরেস্তাদার, পিয়ন কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলার ব্যক্তিগতভাবে ডায়রী পরিচালনা করেন, মোয়াক্কেলদের কাছে আইনজীবীদের মতো তারিখে তারিখে টাকা নিচ্ছেন।আদালত ও মামলা ব্যবস্থাপণায় দুর্নীতি, বিলম্বে প্রতিকার, মামলাজট এবং হয়রানির কারণেও আদালত প্রাঙ্গণে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। এসব রুখতে হলে দুর্নীতি রোধসহ দ্রুত মামলা নিস্পত্তি করে বিচার প্রার্থীদের প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। ২০০ বছরের আইন সংশোধন করে মামলা নিস্পত্তিতে যুগান্তকারী ও সমসাময়িক বিচার পদ্ধতির প্রকাশ ঘটাতে হবে। মামলাজট কমাতে পুরাতন আইন সংষ্কারের বিকল্প নেই।

এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে যে, গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত, বিচারকদের এজলাস ও বাসভবন এবং আইনজীবীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যে নজিরবিহীন ও অনভিপ্রেত ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছে এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ দেশের জেলা আদালতসমূহে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট থেকে এর আগে একাধিকবার স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় দেশের প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, বিচারকদের গাড়ি, বিচারক ও কর্মচারীসহ আদালত সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরে দেশের বিভিন্ন জেলা আদালতে হট্রগোল, বাক-বিতন্ডা এবং মারামারি এগুলো দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা কেন্দ্রিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিবাদ তা সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।মামলাজট, দুর্নীতি এবং বিচার প্রার্থীদের পদে পদে আইনজীবী, আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পুলিশ, পেশকার, মোহরার বা আইনজীবী সহকারী এবং পিয়ন কর্তৃক হয়রানি অনেকাংশে আদালত প্রাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার জন্য দায়ী।এই দায় ব্যক্তির বা শুধু রাজনীতির নয় এ দায় সামষ্টিক। মামলাজট, পেশাজীবী লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি এবং মোটাদাগে দুর্নীতি ও হয়রানি লাঘব না করতে পারলে আদালত প্রাঙ্গণে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা কমবে না হয়তো। একটা ডিম ছুড়েছে তা থামাতে না পারলে এরপরে একাধিক ছুড়বে। এভাবেই চলবে বিচার-আচার এবং আদালত প্রাঙ্গণ। বিচারাঙ্গণ শুধু নয় কোনখানেই ফ্যাসিবাদ শেষ হবার নয়। দুনিয়া যতদিন আছে ফ্যাসিবাদও ততদিন থাকবে, কম আর বেশি।

লেখক: মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম (পিএইচডি), আইন গবেষক ও কলামিস্ট। Email-bdjdj1984du@gmail.com