বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি এগিয়ে আনাসহ তিন আবেদন করেছিলেন ঢাকা থেকে আসা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। কিন্তু ওকালতনামা না থাকায় আদালত সব দরখাস্ত নামঞ্জুর করেছেন।
আজ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক সাইফুল ইসলাম উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আসামিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ তিনটি দরখাস্ত দিয়েছেন আদালতে। এর মধ্যে একটি চিন্ময়ের মামলাটি শুনানি করার জন্য, আরেকটি নথি উপস্থাপনের জন্য এবং অন্যটি জামিন শুনানির তারিখ ২ জানুয়ারি থেকে এগিয়ে আনার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু তার সাথে চট্টগ্রাম বারের কোনো আইনজীবী ছিলেন না, আসামির পক্ষে ওকালতনামা নেই এবং ফাইলিং আইনজীবীরও লিখিত অনুমতি নেই সেহেতু আদালত তার দরখাস্ত নট মেইন্টেইনেবল বলে নামঞ্জুর করেছেন।’
‘চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এমন কারোর ওকালতনামা লাগবে যেকোনো পিটিশন দায়েরের জন্য’— বলেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার সকাল ১১টায় শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আমি জানি এই বারের একজন আইনজীবী (সাইফুল ইসলাম আলিফ) মারা গেছেন’।
এটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই খুনের শিকার আইনজীবী আলিফকে ‘শহীদ’ না বলায় এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীরা সবাই একসাথে প্রতিবাদ করেন। এ সময় এজলাসে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে আদালত অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষের কাছে জানতে চান, তার পক্ষে চট্টগ্রাম বারের কোনো আইনজীবীর ওকালতনামা আছে কিনা, বা মামলা পরিচালনার জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অনুমতি আছে কিনা। এ সময় তিনি নেই বলে জানালে আদালত আইন মেইনটেইন করে তাকে আসতে বলেন।
আরও পড়ুন: আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় ৪ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর
শুনানি শেষে আদালত প্রাঙ্গণে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আদালতকে বলেছেন, চিন্ময়ের মামলাটির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য এবং তিনি নথি উপস্থাপন করবেন। আমরা বলেছি ওনার এ ধরনের দরখাস্ত দেওয়ার আইনগত অধিকার নাই। কারণ ওনার কোনো ওকালতনামা নেই এবং যিনি এই মামলা ফাইল করেছেন তার পক্ষ থেকে তাকে কোনো পাওয়ার দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘শুনানি করার জন্য অথবা নথি উপস্থাপনের জন্য অবশ্যই চট্টগ্রাম বারের একজন আইনজীবীর ওকালতনামা দিতে হবে অথবা এনগেজড কোনো আইনজীবীকে বলতে হবে যে, ঢাকা থেকে যিনি এসেছেন তাকে তিনি ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই আদালত এটা রিজেক্ট করে দিয়েছেন।’
এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে ঢাকা থেকে আসা ওই আইনজীবী বলছেন, আদালতে আইনজীবীদের বাধায় তার আবেদনের শুনানি করা সম্ভব হয়নি।
আবেদনকারী আইনজীবী বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমি তিনটি আবেদন জমা দিয়েছিলাম। একটি হলো যে মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই মামলায় তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে শুনানি করার আবেদন।
“দ্বিতীয়টি হলো, ২৬ নভেম্বর করা মিস মামলার নথি উপস্থাপনের জন্য এবং তৃতীয় আবেদনটি ছিল চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানির নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনার জন্য।”
রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “চিন্ময় প্রভুকে এখানকার আইনজীবীরা কেউ রিপ্রেজেন্ট করতে পারছেন না। জজ সাহেব আমার আবেদন অ্যালাও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেসময় ১০০ জনের মত আইনজীবী একসাথে চিৎকার করতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, ‘উনি পারবেন না, উনি এখানে কেন আসছেন, উনার ওকালতানামা নেই’।
আরও পড়ুন: চিন্ময়কে নিয়ে তাণ্ডবের ঘটনায় ৮ আসামি ৫ দিনের রিমান্ডে
“আমি একজন সিনিয়র আইনজীবী। আমি নিজে স্বাক্ষর করে শুনানি করার আবেদন করেছি। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি এমন, তা বুঝতে পারিনি। এটা খুব দুঃখজনক পরিস্থিতি। পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন বলে আমি রক্ষা পেয়েছি।”
ওকালতনামা না থাকার বিষয়ে রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে যে আইনজীবীরা ছিলেন তারা মামলার আসামি। আমি এসে দেখলাম পরিস্থিতি কী, তারা কিভাবে এখানে আসবেন? যেহেতু এখানে আবেদনের শুনানি হয়নি, আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”
সরেজমিনে সকাল ১১টায় দেখা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে ঢাকা থেকে আইনজীবী আসার খবরে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সকাল থেকে আদালতের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি।
উল্লেখ্য, গত ৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে মামলার বাদী ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এরপর ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রক্ষ্মচারীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন কোতোয়ালী থানায় হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন।
পরে গত ৩ ডিসেম্বর ফের জামিন শুনানি হলে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় শুনানি পিছিয়ে আগামী ২ জানুয়ারি দিন ধার্য্য করেন।