বিভিন্ন সময় নানান ইস্যুতে জেলায় জেলায় বিচারক অপসারণের দাবিতে আইনজীবীদের মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ কিংবা আদালত বর্জনের মতো কঠোর কর্মসূচি নিতে দেখা গেলেও চট্টগ্রাম আদালতে এবার ঘটল ব্যতিক্রমী ঘটনা। চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানের বদলি ঠেকাতে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, কর্মস্থলে যোগদানের দুইমাসের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আসাদুজ্জামান খান বদলির আদেশ হওয়ায় চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। চট্টগ্রাম বারের সমস্ত আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের দাবি একটাই, সেটা হচ্ছে বিচারক আসাদুজ্জামান খানকে চট্টগ্রাম থেকে অন্য কোথাও যাতে বদলি না করা হয়।
কারণ উনি অত্যন্ত সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ বিচারক বলে সবাই দাবি করছে। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে, যেন তাঁর বদলির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন চৌধুরী সইকৃত এ সংক্রান্ত আবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়।
এতে বলা হয়, চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে সম্প্রতি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকেই চট্টগ্রামের বিচারপ্রার্থী সাধারণ জনগণ ও আইনজীবীরা তাঁর বিচারিক কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট। এই অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ ইসেবে সুনাম অর্জন করেছেন।
কিন্তু গত ৯ ডিসেম্বর তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে নীলফামারী জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে বদলি করা হয়। এমতাবস্থায় চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের বদলির আদেশ স্থগিত করার জন্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ৮ সহস্রাধিক আইনজীবী ও অগণিত বিচারপ্রার্থী জনগণের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: চিন্ময়ের পক্ষে ঢাকা থেকে গেলেন আইনজীবী, ওকালতনামা না থাকায় সব দরখাস্ত নামঞ্জুর
এর আগে গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) চার জন জেলা ও দায়রা জজকে বদলি করে আদেশ জারি করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের (বিচার শাখা-৩) থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১) এ. এফ. এম গোলজার রহমানের সই করা প্রজ্ঞাপনের ভাষ্য হলো, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের চার জন সদস্যকে বর্তমান কর্মস্থল হতে বদলি করে পুনারাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নামের পাশে বর্ণিত পদে ও কর্মস্থলে নিয়োগ/বদলি করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) পদে; নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) মো. গোলাম সারোয়ারকে আাইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত কর্মকর্তা (জেলা জজ) পদে; আইন কমিশনের লেজিসলেটিভ ড্রাফটম্যান আবেদা সুলতানাকে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে এবং ঢাকার কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলেট ট্রাইব্যুনালের সদস্য (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ) লুবনা জাহানকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে বদলি করা হয়েছে।
এর মধ্যে মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার নিকট, মো. গোলাম সারোয়ারকে দপ্তর প্রধান কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তার নিকট আগামী ১ জানুয়ারি দায়িত্বভার অর্পণ করে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। আর আবেদা সুলতানা ও লুবনা জাহানকে ১০ ডিসেম্বর দপ্তর প্রধান কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তার নিকট দায়িত্বভার অর্পণ করে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়।