মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম: অতি সম্প্রতি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় প্রদান করেন। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বেশ কয়েকটি বিষয় ছিল তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ছিল অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্তু। এটা সবার জানা আছে যে, ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ এ ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জমির উদ্দিন সরকার এই সংশোধনীটি উত্থাপন করেন। এটি ২৬৮-০ ভোটে পাস হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ২৮ মার্চ।
উচ্চ আদালতের আদেশে ২০১১ সালে এই সংশোধনীটি বাতিল হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় ২০১১ সালের ৩০শে জুন এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ২০১১ সালের ৩রা জুলাই। এই সংশোধনী দ্বারা সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়। সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭ (ক) ও ৭ (খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করা হয়। এই সংশোধনীর বিষয়টি উত্থাপন করেন সেই সময়ের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২৯১-১ ভোটে বিলটি পাস হয়। [তথ্যসূত্র-দৈনিক যুগান্তর। ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪।] ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এই সংশোধনীটি আংশিক অবৈধ বলে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।
আরও পড়ুন: একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে
এটা স্বীকৃত যে, পতিত হাসিনা সরকার গনতন্ত্র হনন ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।আদালতের রায়কে ব্যবহার করে বা সামনে রেখে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল।দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা ও কারচুপির প্রহসন মূলক নির্বাচন দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট যে তামাশা জনগণের সাথে করেছে তা এই জনপদের মানুষ আজীবন মনে রাখবে হয়তো। জনগণের ভোট হরণ ও পাতানো নির্বাচনের জন্য এতো নিচে নামে বিগত সরকার তা ইতিহাসে বিরল। অবশ্য সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেমন- নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগকে ষোলআনা ব্যবহার করেছিল। এবিএম খায়রুল হকসহ সাবেক কয়েকজন বিচারপতি সামান্য পদ-পদবীর জন্য এতো নিচে নেমেছিল যে তত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত ঘোষিত রায় উল্টে জনগণের সাথে প্রতারণা করে।
আরও পড়ুন: আদালত প্রাঙ্গণে অস্থিরতা! দায় কার?
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, বাতিল এবং পুনরায় চালু করা সবই করা হয়েছে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে। অনেকে বলে থাকে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয় বলে বিচারকগণ রাজনীতিবিদদের মতো আচরণ করেন এবং বিচারকের আসনে বসে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। বিষয়টা অতিব গুরুত্বপূর্ণ তার মানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত না হওয়ায় রাজনৈতিক সরকার নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে বিচার বিভাগ ও বিচারককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অপকর্ম করে। বিচারকদের নানা পদ-পদবীর মূলা ঝুলিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করে। ত্রয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয় যা পঞ্চদশ সংশোধনীতে এসে আবার বাতিল করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার। বলা হয়ে থাকে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে বিগত আওয়ামী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ইচ্ছে মতো ও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে যতো ধরনের অন্যায্য মেকানিজম রয়েছে সব বন্দোবস্ত করে বিগত আওয়ামী সরকার।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনে বিচার বিভাগে বিচারকের সাহস বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। একই বিচারক ৫ আগস্টের আগে যে সকল আসামীর জামিন দিতে সাহস করেননি সেই সব আসামি এখন খালাস পাচ্ছে। এটা গুনগত পরিবর্তন বলা যাবে না। বিচার সব সময় সবকালে হবে নিরপেক্ষ ও ভয়ডরহীন। স্বাধীনতার ৫৪ বছর হয়েছে তবুও বিচার বিভাগকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়তে দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক সরকার তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত ও পাকাপোক্ত করতে বিচার বিভাগ ও বিচারককে লাগামহীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে যেটা কিছুটা হলেও এখন বোঝা যাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দাবিয়ে রাখতে আইন আদালতকে ব্যবহার কোনভাবেই মানা যায় না। সভ্য নাগরিক সমাজে আদালতের ঘাড়ে বন্ধুক রেখে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা সত্যি বেমানান।
আরও পড়ুন: বিচার বিভাগ এর পৃথক সচিবালয় গঠন কতদূর!
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দিব্যি বিরোধী দল রাজনীতি করছে যেখানে বাংলাদেশে বিগত তিন/চার দশকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে ছলেবলে কোনঠাসা করায় গনতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে উঠছে না। সবচেয়ে যে প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক দল বা সরকারের অবৈধ ব্যবহারের শিকার হচ্ছে তার মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। বিচার বিভাগ অপরাধী ও অপরাধের বিচার করে বলে এমনটা হচ্ছে। দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া, সমাজে প্রতারণা ও চুরি ডাকাতি ছিনতাই বেড়ে গেলে কিন্তু আদালতেই মামলা হয়। মামলার বিচার হয় আদালতে, যত অপরাধ হয় উপমহাদেশে তার অধিকাংশ সংঘটিত হয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। অপরাধীদের রাজনৈতিক নেতারা পৃষ্ঠপোষকতা করে নিজেদের স্বার্থে। নিজেকে ও অপরাধ কর্মে নিয়োজিত সহকর্মীকে বাঁচাতে রাজনীতিবিদরাই বিচার বিভাগকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই।
আরও পড়ুন: সংবিধান সংস্কার এর সমীকরণ সহজ না জটিল!
সাম্প্রতিক হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরেও পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলবৎ রয়ে গেছে, তা হলো- ক) সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ, অধঃস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রযুক্ত হইবে। এটা প্রজাতন্ত্রের বিচারবিভাগের কর্তৃত্বের উপর নির্বাহী বিভাগের সরাসরি হস্তক্ষেপ। কারণ ’৭২ সালের সংবিধানে ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিলো- বিচার-কর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরি-সহ) এবং শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত থাকবে।
অধিকন্তু বিচার বিভাগ যেহেতু সংবিধানের মূলনীতি অধ্যায়ে (বেসিক স্ট্রাকচার) সেহেতু হাইকোর্ট বিভাগ বিচারবিভাগের ক্ষমতা হরণকারী একটি বিধান কেন বৈধতা দিলেন- তা জানার কোনো সুযোগ হয়নি। হয়তো পূর্ণাঙ্গ রায় বেরুলে জানা যাবে। নির্বাহী বিভাগ বা সরকারের আইনবিভাগ দ্বারা কোনোরূপ প্রভাব ছাড়াই বিচারকগণ স্বাধীনভাবে বিচারিক কর্ম সম্পাদন করছেন কি না, তা প্রজাতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা নিয়ে রাজনীতিকরা মাথা ঘামাচ্ছে না। রীটকারী পক্ষ মনে হয় এটা ভেবে ও দেখে নাই!! বিচারবিভাগ রাজনৈতিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে বা অধিনে থাকলেই বরং খুশি। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের নির্দশনার ফলে যে বিচার সচিবালয় পৃথককরণের উদ্যোগ মাননীয় প্রধান বিচারপতি নিয়েছেন, তা বাস্তবায়নেও এ অনুচ্ছেদের বিধান বাঁধা হতে পারে।
আরও পড়ুন: জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ভাবনা
নির্বিঘ্নে অপরাধ করতে গেলে কিছু স্টেক হোল্ডার হাত করতে হয়। প্রথম ধাক্কায় পুলিশ কব্জায় নিতে হয়। তারপর আদালত ব্যবস্থা। দেশে দুর্নীতি মহোৎসব চলছে। শুধু দেশে নয় পৃথিবী ব্যাপী দুর্নীতি দমন সম্ভব হচ্ছে না। দুর্নীতি করে ধরা খেলে যেতে হয় দুর্নীতি দমন কমিশন হয়ে আদালতে। উভয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করে ক্ষমতাসীন সরকার। দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যকে বিগত বছর গুলোতে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করে এবিএম খায়রুল হক সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতির আসনে বসে অবিচার করেছেন। একটা অবিচার হাজারো অবিচারের জন্ম দিয়েছে। ভোগান্তির শিকার হয়েছে এদেশের জনগণ। নির্বাচন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃ প্রবর্তন হওয়ার পরে আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণ দিতে গিয়ে বিজ্ঞ এটর্নি জেনারেল মহোদয় দুজন সাবেক প্রধান বিচারপতির বিচার হওয়া জরুরী বলে মন্তব্য করেন। কারণ তাঁরা বিচারকের আসনে বসে শপথ ভঙ্গ করেন এবং দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছিলেন।
আরও পড়ুন: ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় বিচারপতি জনাব মোহাম্মদ ইমান আলীর সংখ্যালঘু মত ও বর্তমান বাস্তবতায় রায়টির প্রাসঙ্গিকতা
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা হয় যার অন্যতম কারণ ছিল নির্বাচন ব্যবস্থাকে দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দলীয় সরকার যারাই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তারাই চেয়েছে দীর্ঘদিন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে। সেটা করতে গিয়ে যা হয়েছে তা সকলের জানা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য কোন এক রাজনৈতিক দল প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়েছিল। তারপর সেটা জনগণ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার কারণে হয়নি। তবে যতবারই এদেশে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে তার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা অন্তত গ্রহণ যোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়েছে জনগণকে।
যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনুষঙ্গ টি বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে খুবই প্রয়োজন ছিল বা আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো বিগত পতিত হাসিনা সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে আইন আদালতের মাধ্যমে নির্বাসনে পাঠিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে। যার ফলাফল ছিল বিগত ১৬ বছর দেশে কার্যকর গনতন্ত্র, আইনের শাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অনুপস্থিত ছিল। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল। পারেনি। এরপর একেরপর এক আন্দোলন সংগ্রাম দেখেছে বাংলাদেশ। মোটা দাগে ব্যর্থ আন্দোলন।
কোনক্রমেই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে কেউ ন্যায্য কোন দাবী আদায়ে বাধ্য করতে পারেননি। ছাত্র জনতার আন্দোলনের আগে বিএনপি ও শরিকদল অনেক চেষ্টা করেও বারবার হতাশ হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকে। একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল বলে জনগণ ফুসে ওঠে।ছাত্র জনতা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সরিয়ে নতুন সরকার এনেছে যারা রাষ্ট্র সংস্কারে ব্যস্ত এবং বিচার বিভাগের মাধ্যমে পুনরায় তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে এসেছে যা কিছুটা স্বস্তির।তবে অনেকটা আশঙ্কার জায়গাও রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আইনগত সহায়তা প্রদান সেবার (Legal Aid Services) সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাব: আমার নিজস্ব ভাবনা
তর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল রায়ের ফলে আগামী তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন সেটা সকলের জানা উচিত।ইতোপূর্বে যে সকল প্রধান বিচারপতি ছিলো তারা মোটামুটি সকলেই ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়োগ দেওয়া। বর্তমান সংবিধানের ফরম্যাটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হলে সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান প্রধান উপদেষ্টা হবেন। উনি না হলে বা না মানলে তার পূর্ববর্তী আপিল বিভাগের পরবর্তী সিনিয়র বিচারপতি হতে পারেন। উনি না হলে বা না মানলে যেতে যেতে খায়রুল হক, শামসুদ্দীন মানিক, এনায়েতুর রহিম কিংবা চুপ্পু সাহেবও হতে পারেন। সবাই পতিত সরকারের অনুগত ও পরীক্ষিত। তাই এক্ষুণি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয় তাহলে বেশি লাভবান হবে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ও তার দোসররা। তাই অনেক ভেবে চিন্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
নিঃসন্দেহে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের জন্য ভালো এবং দেশের নির্বাচন ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার তবে তা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। না হলে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। আবার বিজ্ঞ এটর্নি জেনারেল বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এটাতে সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকের কোনও জায়গা নেই। অনেকেই দাবী করছে বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিই সুফল বয়ে আনবে না। তাছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টে আপীল, রিভিউসহ অনেক কিছুই হবে। এতে সাংবিধানিক সংকট ও জটিলতা বাড়বে তাই বিদ্যমান সকল সংকট দূর করতে পতিত হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া সংবিধান বাতিল করে, নতুন সংবিধান লেখা যেতে পারে।
লেখক: মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, পিএইচডি ফেলো, সংবিধান ও আইন গবেষক এবং কলামিস্ট।