ইফতেখার মাহমুদকে আমি “স্যার” সম্বোধন করি- আমার অনেক জ্যেষ্ঠ কিংবা ক্লাস-রুম শিক্ষক- কোনটাই না হওয়া সত্ত্বেও। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইনের এই শিক্ষককে চিনেছি মূলত তাঁর লেখার সূত্রে। জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে ফেসবুকে ছোট ছোট লেখা দিতেন। গভীর মনযোগের সাথে পড়তাম। ছোট্ট লেখা কিন্তু প্রতিটি বাক্যের পরতে পরতে গভীর দার্শনিকতা থাকে, নতুন চিন্তার খোরাক দেয়, আটপৌরে একটি ঘটনা বা চিত্রকে তিনি এমন নিবিড় দার্শনিক ব্যঞ্জনায় তুলে ধরেন যে, থমকে যেতে হয়, আর ভাবতে হয়- আরে, এভাবে তো চিন্তা করিনি!
মনে হতো, জীবন যদি একটি খেলার মাঠ হয়- তিনি এটিকে দেখেন কমেন্টেটরের দৃষ্টিতে; খেলোয়াড় বা স্রেফ উত্তেজিত দর্শকের দৃষ্টিতে নয়। সব ব্যক্তিগত উত্তেজনা, উদ্বেগ, তাপ ও চাপ কে দূরে সরিয়ে তিনি ঘটনাকে ব্যাখ্যা করছেন নির্মোহ, নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে। তিনি আইনের গ্র্যাজুয়েট এবং পেশায় আইনের শিক্ষক কিন্তু চিন্তায়, লেখায় ও বক্তব্যে আশ্চর্যজনকভাবে আইনের সংশ্লেষ থেকে বিযুক্ত থাকতে পারেন। উনার ফেসবুক পোস্ট, গ্রন্থ কিংবা বক্তব্যের কোথাও আইনের ছাপ নেই। একেবারে পরিশুদ্ধ কথাসাহিত্য। এটি ইচ্ছাকৃত কি না জানি না কিন্তু আমাকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করে।
আমি তাঁর লেখার অনুরাগী পাঠকে পরিণত হই। একুশে বইমেলায় গিয়ে তাঁর বই কিনি, পড়ি, অন্যদের গিফট করি- আমি চাইতাম তাঁর লেখা ও চিন্তা ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। একসময় তাঁর বক্তব্য শোনা শুরু করি। ইউটিউবে একবার ঢাকা ওয়াকিং ক্লাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হাঁটার গুরুত্ব নিয়ে তাঁর একটি বক্তব্য পেলাম। মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে মানুষকে কথার জাদু জালে। ইফতেখার মাহমুদ কে আমার ভালো লাগে। তাঁকে আমার শিক্ষক গণ্য করি।
একসময় ইফতেখার মাহমুদ এর সাথে আমার সংযোগ ঘটে। আমাদের সাক্ষাৎ হয়। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে “আইন ও সাহিত্য” বিষয়ে একটি সেমিনার আয়োজনে আমি আমন্ত্রণ জানালে তিনি সাগ্রহে উপস্থিত হন।
২০১৯ সালে আমার “আইনের আয়না” প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার সময় আইনের অনেক রথীমহারথীদের ফেলে আমার মনে পড়ে ইফতেখার মাহমুদ এর কথা। আমার চাওয়া- তিনিই লিখবেন আমার প্রথম গ্রন্থের ভূমিকা। তিনি পাণ্ডুলিপি পড়লেন, গভীর দরদের সাথে ভূমিকা লিখলেন, শুভকামনা জানিয়ে পোস্ট করলেন। আমার জীবনের প্রথম গ্রন্থের সাথে তিনি জড়িয়ে রইলেন ছাপার অক্ষরে।
তাঁর কোমলতা, গভীর সংবেদনশীল মন আর জীবনবোধ আমাকে তীব্র আকর্ষণ করে। জীবনের তুচ্ছ, নগন্য বিষয়কেও তিনি ভীষণ গুরুত্ব দেন। আবার বৈষয়িক কিংবা অর্থ-যশ-ক্ষমতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারকে তিনি অনায়াসে উপেক্ষা করতে পারেন।
যার মস্তিষ্ক থেকে এমন অনন্য চিন্তার অনুরণন ছড়িয়ে পড়তো সবখানে- সম্প্রতি সেই মস্তিষ্কে ফোর্থ স্টেজ ক্যান্সার আক্রমণ করেছে- এই খবর আমার ও অন্য অনেকের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আমি গভীরভাবে দু:খভারাক্রান্ত। আমি বিশ্বাস করি- এই জীবনবাদী মানুষটির বেঁচে থাকার সামান্য লোভ যদি থাকে সেটির কারণ বৈষয়িক কিছু নয়- কন্যা মনীষা, স্ত্রী ও স্বজনের সান্নিধ্যের আকুলতা।
কিন্তু তাঁর চিকিৎসার চেষ্টা একটি বৈষয়িক ও ব্যয়বহুল ব্যাপার। চিকিৎসকদের পরামর্শে এখন তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড নিয়ে যাবার চেষ্টা চলছে। ১ জানুয়ারির আগেই ৭০ লাখ টাকার সংস্থান প্রয়োজন। এই সংগ্রাম উনার পরিবারের পক্ষে একা সামলানো সম্ভব নয়। সবাইকে শামিল হওয়ার অনুরোধ করছি। আল্লাহপাক তাঁকে দ্রুত পূর্ণ শিফা দান করুন, আমিন।
যেভাবে সাহায্য করতে পারেন:
Bank Account Name: TANIA NASREEN KHANAM
Bank Name: DHAKA BANK PLC
Branch Name: Dhanmondi Model Branch
Account Number: 2062000081363
Routing No: 085260436
Swift Code: DHBLBDDH103
bKash: Tania : 01718280860
Mahfuz Bin Yousuf: 01715026270 (write IFTI in the subject)
লেখক: সাঈদ আহসান খালিদ সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।