‘আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হবে’

‘আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হবে’

জুলাই-অগাস্টের গণহত্যাকারীদের বিচার আগামী বিজয় দিবসের আগেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। আগামী বিজয় দিবস গণহত্যাকারীদের শাস্তির রায়ের মাধ্যমে উদযাপন করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

আজ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই গণহত্যার যে বিচারকাজ আমরা শুরু করেছি, আমরা আশা করছি সামনের বছর বিজয় দিবসের আগে এ বিচার অন্তত বিচারিক আদালতে সম্পন্ন হবে। আমরা আগামী বিজয় দিবস গণহত্যাকারীদের শাস্তির রায়ের মাধ্যমে সেলিব্রেশন করব।”

উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুধু একটা গণহত্যা বা একটা মানবতাবিরোধী অপরাধ হয় নাই। বিদায়ী সরকারের আমলে কমপক্ষে চারটা মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। একটা হচ্ছে জুলাই-অগাস্ট হত্যাকাণ্ড, একটা হচ্ছে বিডিআর হত্যাকাণ্ড, একটা হচ্ছে শাপলা হত্যাকাণ্ড আর ধারাবাহিকভাবে চলা গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

“আমাদের সরকার যতদিন আছে এই চারটা গণহত্যার বিচারের জন্য যত রকম প্রচেষ্টা দরকার তা আমরা অবশ্যই করব।”

গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ থেমে যাওয়ার প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে কোনো ‘রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আইন হয়নি’।

আরও পড়ুন: স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ ও বিচারপতি নিয়োগ কাউন্সিল গঠন দ্বারপ্রান্তে: সুপ্রিম কোর্ট

তিনি বলেন, “তারা সংবিধান সংশোধন করে বলেছিল রাজনৈতিক দলকেও শাস্তি দেওয়া যাবে। তখন তারা আইনে কোনো বিধান আনে নাই। আমাদের এখান থেকেও যখন দাবি এসেছিল (রাজনৈতিক দলের শাস্তির) তখন আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব করেছিলাম। রাজনৈতিক দলকে শাস্তির ব্যাপারে আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের মিটিংয়ে অধিকাংশ উপদেষ্টা মতামত দিয়েছেন, তাহলে বিচারটা ডাইভার্ট হয়ে যাবে, তারা বলার সুযোগ পাবে এটা বিচারের উদ্দেশ্যে করা হয় নাই, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

“তাছাড়া দল নিষিদ্ধ করার অন্যান্য আইনে অনেক বিধান রয়েছে; সন্ত্রাস দমন আইনে রয়েছে, নির্বাচনে আইনে রয়েছে, এমনকি স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টের মাধ্যমে করা সম্ভব। করতে চাইলে তো অনলাইনেই করা সম্ভব। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য যে আইন রয়েছে সেখানে নতুন করে এটা আনার দরকার নাই। তাই মতামতের ভিত্তিতে এটা বাদ দেওয়া হয়েছে।”

‘বিডিআর বিদ্রোহের গ্রেপ্তারদের জামিনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধার সৃষ্টি করা হয়নি মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রসিকিউটরই ছিল না, প্রসিউটার সব পালিয়ে গিয়েছিল। দেওয়া হয়েছে অল্প কিছুদিন আগে।

বিগত সরকারে আমলে দায়ের হওয়া গায়েবি মামলায় আদালত থেকে পরোয়ানা জারি হলে ‘বিষয়টি দেখবেন’ বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “হাছান মাহমুদ-ওবায়দুল কাদেরের মত বদমাইশরা কেন পালিয়ে যেতে পেরেছেন সে প্রশ্ন করবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে। অবশ্যই এটি আমাদের সরকারের একটি কালেক্টিভ ব্যার্থতা তবে এটি আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ না।”

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “আমদের প্রায়রিটি হচ্ছে অপরাধগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিচার করা। সেটি আমরা আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ করতে পারব বলে আশা করি।”

আরও পড়ুন: শ্রম আদালতে শ্রমিকেরা বঞ্চিত, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২০ হাজার মামলা

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “যে ঐক্য নিয়ে আমরা রাজপথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শামিল হয়েছিলাম সেই ঐক্যতে যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে, সেই ফাটলটাই প্রথম চ্যালেঞ্জ।”

বিগত ১৬ বছরে সংগঠিত অপরাধগুলোর ‘অগণিত সাক্ষী’ পাওয়া গেছে বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “আমরা স্বচ্ছ কাচের মত সাক্ষী পেয়েছি। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সে বিষয়টি আপনাদের সামনে আনা উচিত না বলে বলছি না।

“আমরা প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছি না, আমরা বিচার করতে চাচ্ছি। এর মাধ্যমে আমরা আগামী প্রজন্মকে ইতিহাসের দায় থেকে মুক্ত করতে চাচ্ছি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সংগঠিত ৩০ হাজার জাসদ নেতাকর্মীর হত্যাকাণ্ডগুলোর যদি বিচার হত তাহলে ১৬ বছরে গুম-খুন হয়তো বন্ধ হতে পারত।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ইসলামসহ অনেকে।

বক্তারা তাদের বক্তব্যে ডিজিএফআই, র‍্যাব ও ডিবি বিলুপ্ত করার দাবি জানান।

উল্লেখ্য, ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর তার এবং তার দলের অনেক মন্ত্রি-এমপির বিরুদ্ধে বহু মামলা হয়েছে।

ওই আন্দোলনে ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রি ও নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। গণহত্যার দুটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল থেকে হাসিনাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানাও জারি হয়েছে।