কেউ জমি দখলে ব্যস্ত, কেউ ব্যস্ত পদ-পদবি দখলে: অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

কেউ জমি দখলে ব্যস্ত, কেউ ব্যস্ত পদ-পদবি দখলে: অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, বর্তমান সময়ে এসে কেউ জমি দখলে ব্যস্ত, কেউ আবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ব্যস্ত, কেউ পদ-পদবি দখলে ব্যস্ত, কেউ নিজস্ব লোক পুনর্বাসনে ব্যস্ত, কিন্তু খুনিদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য, খুনিদের বিচারের জন্য আমাদের ওপর যে পরিমাণ চাপ প্রয়োজন ছিল সেদিকে আপনারা ফোকাস করেননি।

খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, আপনারা যত বেশি চাপে রাখবেন, আমরা তত বেশি এই বিষয়টাকে (বিচার) সামনের দিকে এগিয়ে নিতে দৃঢ় চেষ্টায় থাকবো। আপনারা যত বেশি অতন্দ্র প্রহরীর মতো দায়িত্ব পালন করবেন আমরা রাষ্ট্রকে এবং জনগণের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তত বেশি এজেন্ডাভিত্তিক সাহসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাবো।

আজকে যে ঐক্যের প্রয়োজন, ঐক্য ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। সংস্কার ছাড়া যৌক্তিক কোনো বাংলাদেশ আপনাদের উপহার দেওয়া সম্ভব নয়। ঐক্য ছাড়া, সংস্কার ছাড়া এই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে করাটা কঠিন এবং দুরূহ বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

বিচারের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে আলোচনা কম হওয়ায় কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, চ্যালেঞ্জের জায়গাটা কি সেটা আমাদের বলবেন। আমরা সেটার বিষয়ে যেন যৌক্তিক সমাধানের জায়গায় যেতে পারি। সেটা সুনির্দিষ্টভাবে আমরা পাইনি।

আরও পড়ুন‘আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হবে’

তিনি বলেন, আমার কাছে চ্যালেঞ্জের প্রধান জায়গাটা হলো, জুলাই বিপ্লবে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা রাস্তায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিলাম, সেই লক্ষ্য, সেই ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা, সেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত মিলিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করার যে ঐক্য, সেই ঐক্যটাতে যে ফাটল ধরেছে সেই ফাটলটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।

হরহামেশায় অনেক মিথ্যা মামলা হয়েছে এমন প্রশ্ন এসেছে জানিয়ে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পার্সোনাল গ্রাস এক্সপোজ করার জন্য মামলা দিয়েছেন, আসামির খাতায় নাম দিয়েছেন, এই মামলাগুলোর পরিণতি কি হবে এবং এটার সাথে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের যে মামলা তার কোনো কনফ্লিক্ট হবে কি না? আপনাদের আইনিভাবে, দ্ব্যর্থহীনভাবে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে সে ট্রাইব্যুনালে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৯৭৩ এর ১৯ নম্বর আইন।

সেই আইনে মানবতাবিরোধী আইনের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে হত্যা, নির্যাতন, গুমসহ অনেক অপরাধের কথা বলা হয়েছে, যেই অপরাধগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিভিলিয়ান পপুলেশনের ওপর ঘটানো হয়েছে তার বিচার হবে। সেটি একটা দুইটা স্পেসিফিক ঘটনার দরকার নেই। ইন জেনারেল সেটার বিচার হবে। ঐ আইনেই বলা আছে ডমেস্টিক অন্যান্য আইনে যা বলা থাকুক না কেন, ওটার বিচার ওখানে হবে। অর্ডিনারি গুমের বিচার, খুনের বিচার, নির্যাতনের বিচার, নিপীড়নের বিচার, এগুলো অর্ডিনারি কোর্টে হতে কোনো বাধা নেই এবং সেটাও চলবে।

এই বিচারটায় আমরা কি প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছি এমন অনেক প্রশ্নও আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, আমরা প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছি না। আমরা বিচার করতে চাচ্ছি। কেন বিচার করতে চাচ্ছি? আমরা আগামী প্রজন্মকে ইতিহাসের একটি দায় থেকে মুক্ত করতে চাচ্ছি।