একই আদেশের বিরুদ্ধে দুই আবেদন, আইনজীবীকে তলব
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

চাঁদনী চক মার্কেট নিয়ে একাধিক রিট : হাইকোর্ট বললেন, এটা প্রতারণা

রাজধানীর চাঁদনী চক মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘চাঁদনী চক বিজনেস ফোরাম’র প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে একের পর রিট দায়ের করায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বলেছেন, তথ্য গোপন করে একই বিষয়ে একাধিক রিট করা আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল।

বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজের লিখিত আদেশে এ মন্তব্য করেছেন।

আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রিট খারিজের লিখিত আদেশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

রিট আবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের কার্যকমিটি বাতিল করে সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ শিবলুজ্জামানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিস আদেশে বলা হয়, উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রে প্রাপ্ত তদন্ত প্রতিবেদনের মতামতের আলোকে চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘চাঁদনী চক বিজনেস ফোরাম’ এবং বিদ্যমান কার্যকরী কমিটি বাতিল পূর্বক সংস্থায় মোহাম্মদ শিবলীজ্জামান, সমাজসেবা অফিসার, শহর সমাজসেবা কার্যালয়-৬, মোহাম্মদপুর, ঢাকাকে ‘প্রশাসক’ নিয়োগ করা হলো।

তিনি সংস্থার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে বাতিলকৃত সদস্যদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বিদ্যমান সদস্য তালিকা হালনাগাদ করবেন।

‘চাঁদনী চক বিজনেস ফোরাম’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় কার্যকরী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবেন। এছাড়াও ‘১৯৬১ সালের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ’র প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে এবং সংস্থার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘নির্বাহী কমিটি’র ন্যায় অন্যান্য সমুদয় দায়িত্ব পালন করবেন।

আরও পড়ুনটোল প্লাজায় দুর্ঘটনা : নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নোটিশ

প্রশাসক নিয়োগের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের বাতিল কমিটির সেক্রেটারি মনির হোসেন হাওলাদার।

প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে আপিল না করে সরাসরি রিট করায় গত ২৯ অক্টোবর আবেদনটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আপিল বিভাগে রিট মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ফের প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে

হাইকোর্টের একই বেঞ্চে রিট আবেদন করা হয়। একই ব্যক্তি মনির হোসেন হাওলাদার এ রিট আবেদন করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এবার হাইকোর্ট প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেন। এর পর দিন একই বিষয়ে আগে রিট দায়ের করার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

তখন হাইকোর্ট তথ্য গোপন করে একাধিক রিট করায় উষ্মা প্রকাশ করেন এবং প্রশাসক নিয়োগে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন। এতে থেমে থাকেননি রিটকারী মনির হোসেন হাওলাদার।

তথ্য গোপন করে একই বিষয়ে হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে আবারও রিট করেন তিনি। রিটের শুনানি গত ১৭ ডিসেম্বর প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেন আদালত।

বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগে আগামী ১৩ জানুয়ারি এই আবেদনের ওপর শুনানি হবে।

চাঁদনী চক মার্কেটের সাধারণ ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, সরকার সবদিক বিবেচনা করে বিজনেস ফোরামে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু একটি গোষ্ঠী কিছুতে এটা মেনে নিতে পারছেন না। তারা একের পর এক রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করছেন। আশা করি আপিল বিভাগে ব্যবসায়ীরা ন্যায়বিচার পাবেন।