কক্সবাজারে ৩ কোটি টাকার ইয়াবা পাচারের মামলায় ৭ রোহিঙ্গার যাবজ্জীবন

কক্সবাজারে ৭ কোটি টাকার মাদক উদ্ধারের মামলায় ২ রোহিঙ্গার যাবজ্জীবন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ছয় কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার মাদক উদ্ধারের মামলায় ২ রোহিঙ্গা আসামীকে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ আজ বুধবার (৮ জানুয়ারী) এ রায় প্রদান করেন।

একই আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

দন্ডিত আসামীরা হলেন- মায়ানমারের মংডু জেলার নাগকুড়া থানার মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন ও মোছা: মোস্তফা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জুবায়ের (২২) এবং মংডু সদর থানার মৃত আবদুল গণি ও মোছা: মৌমিনা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিক (২৩)।

দন্ডিত ২ জনেই কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নেচার পার্কস্থ ২৭ নম্বর জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শরনার্থী। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামীদ্বয় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ সিরাজুল ইসলাম এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোঃ আবসার কামাল মামলাটি পরিচালনা করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০২২ সালের ২ এপ্রিল রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটের দিকে টেকনাফস্থ বিজিবি’র ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের ২টি টিম অভিযান চালিয়ে টেকনাফের জালিয়ারদ্বীপ জিরো পয়েন্ট ক্রস করে একটি কাঠের বোট বাংলাদেশ সমুদ্র সীমায় প্রবেশ করলে বোটটি আটক করে।

পরে বোটটি তল্লাশি করে ৫ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা মূল্যের এক কেজি ৬৯ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইচ, এক কোটি ৬২ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫৪ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের কাঠের সহ মোট ৬ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার মাদক উদ্ধার করে।

এসময় কাঠের বোটে থাকা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জুবায়ের ও রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিককে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় টেকনাফস্থ বিজিবি’র ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের নায়েক মো: আনোয়ারুল হক বাদী হয়ে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জুবায়ের ও রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিককে আসামী করে টেকনাফ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ০৫, তারিখ : ০২/০৪/২০২২ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৩০৫/২০২২ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৫৩৮/২০২৩ ইংরেজি।

বিচার ও রায়

২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়। মামলায় ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য বুধবার দিন ধার্য করা হয়।

ধার্য দিনে কক্সবাজারের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০ (গ) ধারায় আসামী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জুবায়ের ও রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিককে দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদন্ড প্রদান করেন।

রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা মূলে দন্ডিত আসামী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জুবায়ের ও রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিককে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন জানিয়েছেন।