বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট পরীক্ষা একজন আইন শিক্ষার্থীর জন্য দীর্ঘদিনের এক আকাঙ্খিত পরীক্ষার নাম। এই পরীক্ষা দিয়েই কৃতকার্য হলে, তবে একজন আইন শিক্ষার্থী নিজেকে আইনজীবী হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারেন ও আদালতে নিজের মামলা পরিচালনা করতে পারেন।
পূর্বে আইনজীবী সনদ শুধুমাত্র ভাইবা নিয়ে প্রদান করা হতো। অতঃপর খুব সম্ভবত ২০০০ সালের দিকে লিখিত পরীক্ষা ও ভাইবা যুক্ত হয় সনদ প্রদানের জন্য এনরোলমেন্ট পরীক্ষায়। তবে ওই সময় পরীক্ষাগুলো বর্তমানের তুলনায় অনেক সহজ হতো এবং বছরে ২টি করে এনরোলমেন্ট পরীক্ষা নেওয়া হতো।
অতঃপর ২০১২ সালে প্রথম প্রিলি সংযুক্ত হয়। তাছাড়া পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে পরীক্ষা অনিয়মিত হয়ে পড়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য। গত ২০২০ সালের পর দীর্ঘ ১৫ বছরে ২২ ও ২৩ সাল হতে নিয়মিত পরীক্ষার একটি ধারাবাহিকতার লক্ষণ দেখা দিলেও বিগত পরীক্ষাগুলো অস্বাভাবিক রকম কঠিনভাবে নেওয়া শুরু হয়।
বিগত বার কাউন্সিলের কর্তারা পরীক্ষা অতিরিক্ত কঠিন করা প্রসঙ্গে বরাবরই বলে এসেছেন যে মানসম্মত আইনজীবী তৈরীর জন্যই নাকি এই অতিরিক্ত কড়াকড়ি। যদিও এত কড়া পরীক্ষার পর একজন শিক্ষানবীশ সনদ পেয়ে আইনজীবী হলেও তার কোন বেতন-ভাতা বা কোন সুযোগ সুবিধা অন্য সব চাকরির মত নেই।
এখানে একজন নতুন আইনজীবীর সনদের পর নিজের প্রচেষ্টায় অনেক সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় ও নিজের অবস্থান তৈরী করতে হয়। যে তথাকথিত মানসম্মত আইনজীবী তৈরী করার যুক্তি দিয়ে এই এনরোলমেন্ট পরীক্ষা কঠিন করা হয়েছে, অথচ বাস্তবে বার কাউন্সিল কর্তৃক আইনজীবীদের ট্রেনিং সেশন পূর্বে থাকলেও বিগত কয়েক বছর ধরে তা আর হচ্ছে না।
এ দ্বিচারিতা থেকে বোঝা যায় যা যে মুখে কর্তাদের মনে আসলে তা নয়। প্রকৃত অর্থে আইনজীবী বেড়ে গেছে বলে বারের অনেক আইনজীবী নেতা বিশ্বাস করতেন এবং এর ফলে আইনজীবী কমানোর জন্য বারের বিগত কর্তাদের এই উদ্দ্যোগ ছিল।
বর্তমানের নতুন কর্তাদের কাছে শিক্ষানবিশরা ভাল কিছু আশা করছিলো। কিন্তু তাদেরও গত ৪ মাসে আশ্বাস ব্যতীত পরীক্ষা আয়োজনে বা কোন সংস্কারে তাদের কোন নড়ন-চড়ন দৃশ্যমান নয়।
সব মিলিয়ে গত ২০২৩ ইং সালের সেপ্টেম্বরে শেষ প্রিলি আয়োজন করেছিল সংস্থাটি। একে কঠিন পরীক্ষা তার উপর অনিয়মিত পরীক্ষা। এতে সেশনজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সম্ভবত এই সংস্থার অধীনে লাইসেন্সের জন্য যে সেশনজট তা আর কোন সেক্টরে নেই।
আইনজীবীর সংখ্যা বেড়েছে এটা সত্য। যদি কমাতে হয় তাহলে বার কাউন্সিলের উচিৎ ছিল প্রথমেই দুই বছরের পাস কোর্স বন্ধ করা। কারণ এখন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে যথেষ্টভাবে ৪ বছরের অনার্সের সুযোগ আছে। এরপরও যদি আরো কমানো দরকার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ফিল্টারিং ও তারা যতজন নিতে চায় সেই সংখ্যা নির্ধারণ করে ধীরে ধীরে সিট কমাতে বাড়াতে পারতেন।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটি না করে তথাকথিত মান বৃদ্ধির নাম করে পরীক্ষা কঠিন করে দিলেন, একই সাথে করলেন ফেললেন অনিয়মিত। আইনে ভর্তির পর ৪ বছর পড়ালেখার পর তার যদি সনদ না হয় তাহলে তার পক্ষে অন্যদিকে ক্যারিয়ার গড়া কষ্টকর, সাথে তো স্বপ্নভঙ্গের হতাশা থাকেই।
সনদহীন কাউকে কোন প্রতিষ্ঠান তাদের ল অফিসার বা অন্য আইনি সংশ্লিষ্ট পোস্টে নিতে অনীহা থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলি সনদদারীদের এক্ষেত্রে প্রধান্য দিতে বেশী আগ্রহী থাকে। বার কাউন্সিলের নির্বাচন নির্দিষ্ট ও সঠিক সময়ে হতে পারলেও পরীক্ষার কথা আসলেই নানাবিধ অজুহাত বের হয়। আপনাদের প্রতি অনুরোধ এভাবে ছেলে মেয়েদের জীবন নষ্ট করবেন না।
কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ পরীক্ষা নিয়মিত করুন ও সেশন জট কমান। আইনজীবী কমাতে একান্ত দরকার হলে আইন বিভাগে ভর্তির সময় ফিল্টারিং করুন মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার মতন। তাছাড়া যারা সনদ নিয়ে প্র্যাক্টিস করে না তাদের সনদ সাময়িক স্থগিত করুণ। এরকম গড়িমসি, বিতর্কিত ও দীর্ঘসূত্রিতার পরীক্ষার জন্য অনেক প্রতিভাবান ছাত্র হারিয়ে যাচ্ছে। অতএব, দয়া করে এবার এর ক্ষান্ত দিন।
লেখক: নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক।