সংবিধান সংস্কার এর প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিক বাস্তবতা

চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত

মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম: বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী  সরকারের দৃঢ় মানসিকতা ও ছাত্র জনতার সংস্কার চেতনাকে কাজে লাগিয়ে দেশ পরিচালনায় ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর  অর্থনীতির চাকা আবারও চাঙ্গা ও উর্দ্ধমুখী হতে শুরু করেছে। দেশের মানুষ কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করছে। কোন মানুষ এখন আর না খেয়ে থাকে না। দেশ এখন আইন, বিচার ও জনপ্রশাসন, নির্বাচন, পুলিশ, সংবিধানসহ নানামুখী  সংস্কারের মহাসড়কে, তলানিতে যাওয়া রিজার্ভ বাড়তে শুরু করেছে, রেমিটেন্স দিয়ে ভরপুর ইত্যাদি আমরা শুনছি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরো দেশবাসী স্বস্তি প্রকাশ করছে।

অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক কথাবার্তা শুনতে ভালই লাগে। তারপরও জুলাই আগস্ট পরবর্তী অর্থনীতি আমাদের জন্য কিছু সতর্ক বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। যা  সামাল দিতে কৌশল খুঁজতে হবে সরকারকে। মোটাদাগে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব এগুলো অনুৎপাদনশীল খাতে আয় যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত, এটা ক্রমবর্ধমান। বিশেষ করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রভাব এবং দখলদারিত্ব বেশি ভোগাচ্ছে সব সেক্টরকে। কিভাবে অনুৎপাদনশীল খাতে আয় কমিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল করা যায় তার কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো এই নিবন্ধে।

লেখার শুরুতে জেনে রাখা ভালো যে কোন কোন বিষয় গুলো  অনুৎপাদনশীল আয়ের খাত এবং  কি। কিছু উদাহরণ দিয়ে রাখি। ১) রাজনীতি, ২) ঘুষ, ৩) দখল-বেদখল এবং টেন্ডারবাজি, ৪) চাঁদাবজি, ৫) জুয়া বা ক্যাসিনো, ৬) মাদক ব্যবসা, ৭) মধ্যস্বত্ত্বভোগী, ৮) ত্রাণ ও চাল চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ৯) প্রতারণা, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ এবং ১০) লোন, ক্ষুদ্র ও মাঝারী ফটকা কারবারী এবং ১১) সুদ ও মহাজনী ব্যবসা ইত্যাদি। উপরোল্লিখিত খাতগুলোতে আয় করতে শারীরিক বা মানসিক শ্রম বা পরিশ্রম লাগে না।

কিন্তু অর্থনীতিতে উপযোগ সৃষ্টিতে শারিরিক বা কায়িক শ্রমের দরকার পড়ে যা মোটাদাগে অভাব পূরণ করে। বিনিময় মূল্যও তৈরি করে এবং সমাজে আয় ও উৎপাদনের খাতও বাড়িয়ে দেয়। আর সামগ্রিকভাবে আয় এবং উৎপাদন খাত নতুন করে বিনিয়োগগণ্য হয়ে রাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা গতিশীল করে। ঠিক তখনই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যায়।

কিন্তু রাষ্ট্রে এমন কিছু আয়ের খাত প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে, যার মাধ্যমে উপযোগ তৈরী হচ্ছে না এবং গোটা কতক ব্যক্তি ও বিশেষ গোষ্ঠী বাদে সমাজে সামগ্রিক অভাব পূরণে ভূমিকা রাখতে পারছে না। রাজনীতি, ঘুষসহ অন্যান্য অনুৎপাদনশীল খাতে আয়ের মাধ্যমে ওই বিশেষ গোষ্ঠী উচ্চাভিলাষী ও বিলাশ বহুল জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। অল্প সময়ে ও কম পরিশ্রমে রাতারাতি ধনী ও অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়া যায় বলে বাংলাদেশে এই রকম আয়ের খাতগুলো দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম ও বেশি শিক্ষিত মোটামুটি সকলেই অনুৎপাদনশীল আয়ের খাতগুলোতে যুক্ত হবার চেষ্টা করছে।

অপরদিকে, কৃষিতে নতুন করে দুচিন্তা দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের কৃষিতে নতুন কৃষক বা কৃষি শ্রমিক তৈরী হচ্ছে না বরং প্রায় প্রতিদিনই নতুন, অদক্ষ ও দক্ষ শ্রমিক কমে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে। যদি অনুৎপাদনশীল খাতগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী সাহসী ব্যবস্থা গ্রহণ না করা যায় তাহলে সামনে খুবই ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। যা সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনীয় সময় ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন না করলে বা যতটুকু করা যায় তার সর্বোচ্চ করার প্রচেষ্টা না থাকলে শুধু শিল্প বা আমদানীর উপর নির্ভর করে কোনো দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরী করতে পারে না।

আবার মানবসম্পদ বা দক্ষ জনশক্তি যদি একটা বিশেষ ঘোরের মাঝে থেকে তাদের কাজ ভুলে যায় তাহলে তা আরো ক্ষতিকর কিছুর ইঙ্গিত করে। কৃষকের ঘরের সন্তান আর কৃষক হচ্ছে না। আমি বলছি না যে, কৃষকের ঘরের সন্তান কৃষকই হতে হবে। কিন্তু যখন কৃষকের সন্তান পড়াশুনা করে চাকুরী পাবার পর কৃষক এবং কৃষির প্রতি সম্মান রাখে না বা কেউ বাধ্য হলেও কৃষিতে না গিয়ে অন্য পেশায় যায় তখন এই বিষয়টি আমাদের মেনে নিতেই হবে যে, কৃষির অর্থনৈতিক অবস্থা যেমন সম্ভাবনাময় নয় তেমনি এর সামাজিক মর্যাদাও কমে গেছে।

সমাজে আর কৃষকের সাথে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না, একজন রিক্সা বা ভ্যান চালক যতটুকু অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পায় একজন কৃষক তেমনটি পায় না। আবার কৃষিখাতে বিনিয়োগ কৃষককেই করতে হয় কিন্তু তার লাভের সম্ভাবনা খুবই কম। এমন কারণে কৃষিখাতে আর নতুন কৃষক বা কৃষি শ্রমিক যে হারে আসা উচিত সে হারে আসছে না। কৃষক নিজেও চায় না তার সন্তান কৃষক হোক বা কৃষি সংশ্লিষ্ট কোন পেশায় থাক। এখন কৃষির চেয়ে দোকান করা, দালালি করা, ভ্যান চালানো, গার্মেন্টেসে কাজ করা অনেক বেশী অর্থনৈতিক নিরাপত্তার মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে। বাবা তার সন্তানকে কোন না কোনভাবে এই শিক্ষা দেয় যে, জীবনে যাই করো না কেন কৃষক হইও না।

বর্তমান সময়ের অন্যতম সমালোচিত বিষয় কিশোর গ্যাং। শহরের চেয়ে গ্রামেও এর উপস্থিতি কোন অংশে কম নয়। সামাজিক অস্থিরতার পিছনে তাদের অংশগ্রহণ আছে। শহরে আগে টোকাইদের মাঝে মোটামুটিভাবে অপরাধ কর্মকাণ্ডগুলো সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা সকল শিশু কিশোরের মাঝে ছড়িয়ে গেছে। ভালোবাসা ও ভালো থাকার চেয়ে টাকার সাথে থাকা, বিলাসিতায় থাকা অধিক বেশী আগ্রহের বলে এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। অর্থের পিছনে ছুটে পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে নৈতিকতার দৃঢ়তা। পরিবার থেকে যে ভাঙ্গন শুরু হচ্ছে তা সমাজ এবং রাষ্ট্রকেও খারাপভাবে প্রভাবিত করছে। আমাদের আজ একটা কিছু করে সব কিছু ঠিক করা সম্ভব না আর তাই সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আমাদের সমাজে যদি আয়ের খাতগুলো সব উৎপাদন মুখী হয় তাহলে দ্রব্য মূল্য কমিয়ে আনতেও এটি যেমন ভূমিকা রাখবে তেমনি বিলাসবহুল জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে যাবে। কোন একজন ব্যক্তি ঘুষ গ্রহণ করার পর বাজারে গিয়ে দোকানদার যেমন দাম চায় বা বাজারের বিলাশবহুল দ্রব্য কেনার চেষ্টা করে। ঘুষখোরদের দ্রব্যের দাম নিয়ে অনাপত্তি বা তার দেখাদেখি আরও কিছু লোক তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে শুরু করে যাতে করে সমাজে এই অনুৎপাদনশীল আয় খাতগুলোর প্রতি আগ্রহ তৈরী হয় যা আমাদের সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে নিন্মমুখী করে তুলছে।

প্রত্যেক মানুষ তার প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে অর্থাৎ সবার ভেতর শ্রেষ্ঠ হবার বাসনা রয়েছে। সকলে প্রত্যাশা করে সমাজের লোক তাকে সম্মান করুক। সামাজিক অনুষ্ঠানে বা বিচার-সালিশে তার আসন হোক বিশেষ মর্যাদার আর এই ক্ষেত্রে যখন অর্থ এবং রাজনৈতিক প্রভাব সবচেয়ে বেশি কাজের তখন রাজনীতির প্রতি রাজনৈতিক জ্ঞান থেকে নয় বরং অনুৎপাদনশীল আয় খাতের বৈধ উপায়ের জন্য রাজনীতির প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়। আর তাই সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেমন অনেকে দল পরির্তন করে তেমনি যে কোন সরকারের সঙ্গেই সমঝোতা করে চলার মত মানসিকতা রাখে।

বর্তমানের তরুণ সমাজে তাদের দাপট তৈরীর জন্য তাদের অনেক খাপছাড়া কাজের বিরুদ্ধে যেন কেউ কোন কথা বলতে না পারে তার জন্য রাজনীতির সাথে যুক্ত হয় তাদের ব্যবহার করার জন্য ও তাদের মাধ্যমে ব্যবহৃত হবার জন্য। বর্তমানে রাজনীতি অনুৎপাদনশীল আয় খাতের মধ্যে এক রকম অলিখিত বৈধতা লাভ করায় অন্য খাতগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বা ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

বর্তমানে ক্রিকেটসহ খেলাধুলায় বাজিসহ নানা রকম ক্যাসিনো শহর থেকে গ্রামে বেশ জনপ্রিয়। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কাজ না করে খেলা দেখে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে এবং অনেকেই বাজির মাধ্যমে তার অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে চায়। তরুণদের মাঝে একটা বিশেষ শ্রেণী এর মাধ্যমে নিজেদের একটা গ্রুপ ও আয়ের পথ তৈরী করেছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদের প্রয়োজনে ছোটখাট অপরাধ থেকে শুরু করে সুযোগের অপব্যবহার করে বড় বড় অপরাধ করে বসে। অল্প বয়সের এ অলসতা ভবিষ্যতের জন্যও বেশ ক্ষতির কারণ।

একজন পুলিশ তার দ্বায়িত্বের জায়গা থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিবে বা মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করবে কেননা সে এ কাজ করার জন্যই বেতন পায়। আবার একজন চেয়ারম্যান বয়স্ক ভাতার কার্ড যার প্রয়োজন তাকে দিবে তার দ্বায়িত্বের জায়গা থেকে। কিন্তু এমন সব দ্বায়িত্ব পূরণের জায়গায় অবৈধ লেনদেন হয় তখন সমাজের স্বাভাবিক কাজগুলো আর প্রকৃতির  নিয়মে হয় না। কাজের গতিরোধ হয়, ব্যবস্থার উপর আস্থা নষ্ট হয় যা একজন নাগরিককেও হতাশ করে। ক্ষমতা বা টাকার অপব্যবহার ছাড়া যদি দ্বায়িত্ব পালন করা হয় তাহলে দেশের উৎপাদনের গতি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

কোন পণ্য বা দ্রব্য উৎপাদনকারী যে মূল্যে দ্রব্য উৎপাদন এবং বিক্রি করে তার চেয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মূল্যে তা ভোক্তার কাছে বিক্রি হয়। পরিবহন বা শ্রমিক মূল্য ছাড়াও চাঁদাবাজি এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। এই চাঁদাবাজির কারণে অনেক ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন কাজ যেমন তার মান বজায় রাখতে পারে না তেমনি অনেক বিনিয়োগকারীকে অর্থ বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে। ব্যবসার অনিশ্চয়তা উৎপাদনের অনিশ্চয়তা সর্বোপরি সামাজিক নিরাপত্তা এর মাধ্যমে বিঘ্নিত হয় পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা।

একটি নষ্ট আপেলকে তাজা বিশ্বাস করানো অপরাধের পর্যায়েই পড়ে। আবার কোন দ্রব্যের উৎপাদনকারী, বিক্রেতা বা ভোক্তা না হয়েও যখন দ্রব্যের দামের উপর অবৈধ প্রভাব তৈরী করা হয় তা বাজার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু সুবিধাভোগীর কারণে মানহীন পণ্য বাজারে চলে আসে। ক্রেতা ও বিক্রেতা এর ফলে তাদের অর্থ খরচ করলেও পর্যাপ্ত সেবা পায় না। শারীরিক এবং মানসিক শ্রমের মাধ্যমে তৈরী সম্পদ যদি নিজের কাজে না লাগে এবং তা যদি অন্য কেউ ভোগ করে তাহলে নিজের ভেতর ক্ষোভ, রাগ এবং ঘৃণা তৈরী হতে বাধ্য। এই অবস্থায় একজন ব্যক্তি তার সৃষ্টিশীল চিন্তাকেও কাজে লাগার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। এতে করে একদিকে একদল নিজে হতাশ হয়ে যায় আর অন্য দল অল্পে অনেক আয়ের আশায় ভয়াবহ অনুৎপাদনশীল আয় খাতের সাথে যুক্ত হতে থাকে।

একজন ব্যক্তি ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তার মনের স্বাভাবিক শান্তির কথা ভুলে শুধু ঋণ পরিশোধের জন্যই কাজ করতে থাকে। এতে তার উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাহত হয়। আবার যারা ক্ষমতাবান তারা ঋণ খেলাপির রুপ ধারণ করে দেশের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্টানগুলো বিপদে ফেলে। ঋণ ব্যবসার কারণে সমাজের এক বিশেষ শ্রেণীর মানুষকে মজুতদারী এবং সুদে টাকা প্রদান একটি দুষ্ট চক্রে জড়িয়ে নিচ্ছে। মাদক যেমন মাদকগ্রহণকারীর স্বাভাবিক বুদ্ধি বিবেক নষ্ট করে দেয় তেমনি তার কাজের ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। এই মাদকের মাধ্যমে কাউকে অনেক কাজ করার পথ বন্ধ করে দেয়া হলেও তার কাছ থেকে নেয়া হয় টাকাসহ অনেক কিছু। মাদক এবং মাদক ব্যবসা সমাজের সম্ভাবনার গতিরোধ করছে এতে কারও কোন সন্দেহ নাই। থাকা উচিতও নয়।

বিগত তিন দশকে মেধাভিত্তিক রাজনীতির চর্চা অনেকাংশে কমতে শুরু করে। যার ফলে যে কোন উপায়ে অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে কিছু রাজনীতিবিদ চাঁদাবাজি এবং অবৈধ দখলদারিত্বে জড়িয়ে যাচ্ছে।বিশেষ করে ক্ষমতার পালাবদলে এমনটি বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষ তার  নিজের, পরিবারের, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি অগাধ প্রেম না থাকে তাহলে ভালো রাজনীতিবিদ হতে পারে না।দুষ্টু রাজনীতিক ভালো কাজ থেকে সব সময় দূরে থাকার চেষ্টা করবে।

কনটেন্ট ক্রিয়েট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু আয় হচ্ছে এবং একদল মানুষ বিশেষ করে যুব শ্রেনী সস্তা বিনোদনে জড়িয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি যদি সমাজে সস্তা বিনোদনগুলো সহজলভ্য হয় এবং তার প্রতি সমাজের বিরাট অংশ বুদ হয়ে থাকে তাহলে সমাজে ভালো কিছু আসা খুবই কঠিন। বাংলাদেশে বর্তমানে জ্ঞান চর্চার চেয়ে সস্তা বিনোদন যেভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে ও আয়ের পথ তৈরী করছে তাতে করে খুব তাড়াতড়ি আমরা একটি বোধশক্তিহীন জাতিতে পরিণত হবো। সমাজের আয়ের খাতগুলো হোক নতুন কিছু তৈরীর কারখানা। শ্রম এবং শ্রমিকের প্রতি সম্মান এবং আস্থা হবে যার ভিত্তি। শুধু নিজের প্রয়োজনে যে খাতগুলো পরিচলিত হবে না বরং লক্ষ্য থাকবে সমাজের সকল মানুষের মঙ্গল সাধনের।

লেখক: মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আইন গবেষক ও কলামিস্ট।