সংবিধান সংস্কার কমিশন উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ করে দেশের সব বিভাগে হাইকোর্ট বিভাগের সমান এখতিয়ারসম্পন্ন হাইকোর্টের স্থায়ী আসন চালুর সুপারিশ করেছে। তবে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আসন রাজধানীতেই থাকবে। এছাড়া দেশের অধস্তন আদালতকে ‘স্থানীয় আদালত’ নামকরণ করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) জমা দেওয়া সংস্কারের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদনে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজের নেতৃত্বাধীন কমিশন এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সুপারিশের সারসংক্ষেপ পরে কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বিচার বিভাগ নিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
সংবিধান সংস্কার কমিশন উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ করে দেশের সব বিভাগে হাইকোর্ট বিভাগের সমান এখতিয়ারসম্পন্ন হাইকোর্টের স্থায়ী আসন চালুর সুপারিশ করেছে। তবে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আসন রাজধানীতেই থাকবে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশনের (জুডিশিয়াল অ্যাপয়েনমেন্টস কমিশন) সুপারিশ করা হয়েছে। এর সদস্যরা হবেন প্রধান বিচারপতি (পদাধিকারবলে কমিশনের প্রধান); আপিল বিভাগের পরবর্তী দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারক (পদাধিকারবলে সদস্য); হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুজন বিচারপতি (পদাধিকারবলে সদস্য); অ্যাটর্নি জেনারেল এবং একজন নাগরিক (সংসদের উচ্চকক্ষ কর্তৃক মনোনীত)।
এছাড়া দেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করতে সংবিধানে একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছে কমিশন। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন (জুডিশিয়াল অ্যাপয়েনমেন্টস কমিশন) গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল থাকবে। তদন্ত ও অনুসন্ধানের জন্য অভিযোগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে প্রেরণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপ্রধানের পাশাপাশি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন কাউন্সিল, এনসিসি)-এর থাকবে। কমিশন বিচার বিভাগকে পূর্ণ আর্থিক স্বাধীনতা প্রদানের সুপারিশ করেছে।
কমিশন অধস্তন আদালতের পরিবর্তে ‘স্থানীয় আদালত’ ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে। স্থানীয় আদালতের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি, ছুটি, শৃঙ্খলাসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত থাকবে।
এই লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে একটি বিচারিক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করছে। সংযুক্ত তহবিলের অর্থায়নে সুপ্রিম কোর্ট এবং স্থানীয় আদালতের প্রশাসনিক কার্যক্রম, বাজেট প্রণয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর এই সচিবালয়ের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
এ ছাড়া কমিশন একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে।