সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) এ বিষয়টি জানানো হয়।
এ ছাড়া ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে রোববার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি। ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও মহাসচিব কায়সার কামালের নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে। তদন্ত কমিটিকে সরেজমিন অনুসন্ধান ও ফোরামের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকে কমিটি বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি।’ তবে কী কারণে কমিটি বাতিল করা হয়েছে, তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন।
তবে সিলেট শাখার কমিটি বিলুপ্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে সিলেটের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনা অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান সদস্য নুরুল হককে ভেতরে-ভেতরে সমর্থন দেয়। তবে একই পদে এখানে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিনও প্রার্থী হন।
তাঁকে নির্বাচন থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলেও তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। এ অবস্থায় কিছুদিন প্রচার-প্রচারণা চালালেও শেষ পর্যন্ত নুরুল হক প্রার্থী হননি। মূলত এর পর থেকেই বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। এর প্রভাব পড়ে নির্বাচনে।
আরও পড়ুন: সিলেট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের জয়জয়কার
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৬টি পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১২টিতে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপিপন্থী ছয়জন ও জামায়াতপন্থী পাঁচজন জয় পেয়েছেন। বাকিদের মধ্যে একজন জাসদপন্থী এবং দুজনের দলীয় পরিচয় জানা যায়নি।
আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে প্রায় প্রতিটি পদেই বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তাঁরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন না। এতে বিএনপি ঘরানার প্রার্থীদের দলটির সমর্থক অনেক ভোটার ভোট দেননি। এ অবস্থায় বিএনপিপন্থী বেশিরভাগ আইনজীবী নির্বাচনে পরাজিত হন। তবে আওয়ামী লীগের চলমান দুঃসময়েও দলটির সমর্থক অনেক আইনজীবী জয় পেয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন।
এদিকে গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) বেলা তিনটার দিকে সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী (আবদাল) ও সাধারণ সম্পাদক মো. জোবায়ের বখতসহ কমিটির সবাই শপথ নিয়েছেন।
এর আগে বেলা দেড়টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনার সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সমিতির দীর্ঘদিনের প্রথা অনুযায়ী গঠনতন্ত্রের আলোকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ ও গণনাকার্য সম্পন্ন হয়। সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। নির্বাচন চলাকালীন কিংবা ভোট গণনাকালীন নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। সিলেট জেলা বারের নির্বাচন কোনো সময়ই দলীয়ভিত্তিক কিংবা দলীয় প্যানেলভিত্তিক হয়নি। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বিভিন্ন অনলাইন, প্রিন্ট এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া একে পরিকল্পিতভাবে ভ্রান্তিমূলক তথ্যের ভিত্তিতে দলীয় নির্বাচন হিসেবে প্রচার করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ সংবাদের কোনো প্রতিবাদ তাৎক্ষণিক না করায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়। তাই নির্বাচন কমিশন এ প্রচার-প্রোপাগান্ডার জোর এবং তীব্র প্রতিবাদ করছে। এ প্রচার-প্রোপাগান্ডা থেকে বিরত থাকার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা গেল।’
সোমবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী (আবদাল) ও সাধারণ সম্পাদক মো. জোবায়ের বখতও গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন।
এতে তাঁরা বলেছেন, আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কোনো সময়ই দলীয়ভিত্তিক কিংবা দলীয় প্যানেলভিত্তিক হয়নি। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তাঁরা দলীয় পরিচয়ে কিংবা প্যানেলে নির্বাচন করেননি এবং দলীয় পরিচয়ে নির্বাচিতও হননি।