সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মারা যাননি: কারা কর্তৃপক্ষ

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শাসসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মারা যাননি বলে নিশ্চিত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) কারা সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এর আগে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী জেলখানায় নিহত হয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই পোস্ট করেন। ছড়িয়ে পড়া এই তথ্যের সত্যতা জানতে কারা কর্তৃপক্ষের সাথে গণমাধ্যম থেকে যোগাযোগ করা হলে তথ্যটি ভুয়া ও গুজব বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে বিচারপতি মানিক মারা যাননি বলে নিশ্চিত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক হাওয়া বদলের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে সীমান্তে তাঁকে আটক করা হয়। এরপর একাধিক মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

ছাত্র বিক্ষোভের সময় বেসকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই-এর একটি টকশো গিয়ে এক নারী উপস্থাপকের সাথে আক্রমনাত্মক আচরণ করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন বিচারপতি মানিক। সেটি ভিডিও ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয়। তিনি শেখ মুজিব হত্যা মামলার আইনজীবীও ছিলেন।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মমতাজ মেহেদীর জামিন স্থগিত

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তাকে হাইকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সে নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে শাসসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিচারপতি হিসেবে পুনর্বহাল হন।

বিচারপতি থাকা অবস্থায় শাসসুদ্দিন মানিককে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। যে রায়টি কেন্দ্র করে বিচারপতি মানিক সমালোচনার কেন্দ্রে আসেন সেটি হচ্ছে, কর্নেল তাহের হত্যা মামলার রায়।

সে রায়ে বিচারপতি মানিক কর্নেল তাহেরের বিচারকে ‘ঠান্ডা মাথার খুন’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি জিয়াউর রহমানকে ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

২০১৫ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি থাকা অবস্থায় শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সাথে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মি. সিনহা শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে একটি বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।

এরপর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অভিশংসন চেয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠিও দিয়েছিলেন। অবসরে যাবার কয়েকদিন আগে তিনি একাজ করেছিলেন।

বিচারপতি থাকা অবস্থায় বিমানের বিজনেস ক্লাসে সিট না পাওয়া নিয়ে বিচারপতি মানিক লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়েছিলেন। ২০১২ সালের শেষের দিকে এই ঘটনা ঘটেছিল।

সেই ঘটনার জেরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করেছিলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

পরে বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চারজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাইকোর্টে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বেঞ্চে গিয়ে নি:শর্ত ক্ষমতা চেয়ে নিষ্কৃতি পান।

২০১২ সালে বিচারপতি থাকা অবস্থায় লন্ডনে তিনি হামলার শিকার হয়েছিলেন। এছাড়া ২০১৫ সালে অবসর গ্রহণের পরে আবারো তিনি লন্ডনে হামলার শিকার হন।

আরও পড়ুন: পরীমণিকে আদালতের ভর্ৎসনা

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক দ্বৈত নাগরিকত্ব নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের পাশপাশি ব্রিটেনেরও নাগরিক।

২০১২ সালের জুন মাসে তৎকালীন জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সমালোচনা করেছিলেন। আদালতে বসে মি. মানিক তৎকালীন সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদের (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) নজিরবিহীন সমালোচনা করেছিলেন।

এরপর মি. মানিকের সমালোচনা করা হয় সংসদে। মি. মানিককে অপসারণের লক্ষ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার জন্য তাঁরা প্রধান বিচারপতি এবং প্রেসিডেন্টকে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন।

তৎকালীন সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে ‘স্যাডিস্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

“তিনি মানুষকে অপমান করতে পছন্দ করেন। যারা স্যাডিস্ট, অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়, আমরা তাদের ঘৃণা করি,” বলেছিলেন তোফায়েল আহমেদ।

তৎকালীন সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদের বলেছিলেন, “শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তাঁর পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন”

তোফায়ল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছাড়াও শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও রাশেদ খান মেনন শামসুদ্দিন চৌধুরীর মানিকের সমালোচনা করেছিলেন।

সংসদে এই সমালোচনার পরেও শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কোন অসুবিধা হয়নি। সংসদের সমালোচনার ছয়মাস পরেই তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে ২০১৩ সালে পদোন্নতি পান।

চাকরি শেষে বাড়ি না ছেড়েও তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে সরকারি বাড়িভাড়া পরিশোধ না করাযর বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।