বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনগত সুরক্ষা কর্মসূচির (সেলপ) উদ্যোগ ‘স্বপ্নসারথি’র ৩০ জন কিশোরী। তাদের স্বপ্ন ভবিষ্যতে আইন পেশায় যুক্ত হয়ে সমাজে পরিবর্তন আনা।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ কিশোরীদের উদ্দেশ্যে বলেন,
মেয়েরা এখন ছেলেদের সঙ্গে সমানতালে লেখাপড়া করছে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে ঢুকছে। তারা নিজেদের যোগ্যতায় এটি অর্জন করছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আইন থাকা সত্ত্বেও সমাজব্যবস্থা আইনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। নারী-পুরুষের সমান সচেতনতা ও নারীদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাব দেন, আইনের মূল বিষয় ও সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলো স্কুল পর্যায়ে পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা উচিত। তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধান শেখায় যে বর্ণ, ধর্ম, ভাষা বা অন্য কোনো কারণে মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকবে না।”
আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, কিশোরীদের দৃঢ় প্রত্যয় ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশ বা তারও বেশি হবে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ জানান, সারা দেশে ৬০ হাজার ‘স্বপ্নসারথি’ সদস্যের মধ্যে প্রায় ১ হাজার কিশোরীর স্বপ্ন আইনজীবী বা বিচারক হওয়া। তাদের মধ্য থেকে ৩০ জন সুপ্রিম কোর্টে আসার সুযোগ পেয়েছে, যা তাদের জীবনে এক অনন্য মাইলফলক।
ব্র্যাকের পক্ষ থেকে সেলপ ও জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি (জিজেডি) কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শাশ্বতী বিপ্লব এবং লিগ্যাল এইড এন্ড পলিসি এডভোকেসি লিড এটিএম মোরশেদ আলমও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে কিশোরীরা প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের হাতে তাদের লেখা চিঠি ও আঁকা ছবির ‘স্ক্র্যাপ বুক’ উপহার দেন। প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকেও তাদের উপহার দেওয়া হয় এবং সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম ঘুরে দেখানো হয়।
বর্তমানে দেশের ৩১ জেলার ২ হাজার ৪০০ গ্রামে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৬০ হাজার কিশোরী ‘স্বপ্নসারথি’ কর্মসূচির আওতায় কাজ করছে। এই উদ্যোগটি কিশোরীদের শিক্ষা, দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং ভবিষ্যত কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি নিশ্চিত করছে।