কাবিননামায় জাল-জালিয়াতি করে দেনমোহরের পরিমাণ বাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগে মো. আনারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী লতিফা খাতুন ও কাজী মো. আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
পাবনা অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (আমলী-১)-এর বিচারক গত ২৪ আগস্ট এ আদেশ দেন। বিচারক দণ্ডবিধির ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯/৩৪ ধারার অপরাধ আমলে নেন এবং আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, পাবনা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে এক পারিবারিক বিরোধের জেরে চলতি বছরের গত ১৬ জুলাই বাদী আনারুল ইসলাম স্ত্রী লতিফা খাতুনের বিরুদ্ধে পারিবারিক বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
বাদী মো. আনারুল ইসলাম অভিযোগ করেছিলেন, তার স্ত্রী লতিফা খাতুন দেনমোহর বাবদ ৪ লাখ টাকা দাবি করছেন। অথচ তার নিকাহনামায় দেনমোহরের পরিমাণ ১ লাখ টাকা উল্লেখ আছে।
এরপর ৩০ জুলাই উভয় পক্ষকে আপোষ মীমাংসার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়।
নির্ধারিত দিনে উপস্থিত হয়ে বাদী সংসার টিকিয়ে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বিবাদী সংসার করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ টাকা ফেরতের দাবি করেন।
বাদী ১ লাখ টাকা দিতে রাজি হলেও লতিফা খাতুন দাবি করেন দেনমোহর ৪ লাখ টাকা। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়।
বাদী ও বিবাদী উভয়ের দাখিল করা নিকাহনামা একই কাজী মো. আব্দুল মজিদ কর্তৃক সত্যায়িত হলেও, দেনমোহরের অঙ্ক ভিন্ন পাওয়া যায়। বাদীর দাখিলকৃত নিকাহনামায় দেনমোহর: ১,০০,০০০ টাকা, অন্যদিকে বিবাদীর দাখিলকৃত নিকাহনামায় দেনমোহর: ৪,০০,০০০ টাকা।
আরও পড়ুন : দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক আইন কর্মকর্তা নিয়োগ
এতে আদালতের সন্দেহ হয়।
এ ঘটনায় লিগ্যাল এইড অফিসে কাজী মো. আব্দুল মজিদ হাজির হয়ে জানান, তার কার্যালয় থেকে আনারুল ইসলাম ও লতিফা খাতুনের বিয়ে ২০২৪ সালের ১ মে নিবন্ধিত হয় এবং দেনমোহর নির্ধারিত হয় ১ লাখ টাকা।
তিনি দাবি করেন, ৪ লাখ টাকার নিকাহনামা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি হতে পারে।
তবে বিবাদী লতিফা খাতুন জানান, ওই কাবিননামাটি তিনি কাজীর অফিস থেকেই পেয়েছেন এবং কাজীর আসল স্বাক্ষর তাতে আছে। এমনকি তিনি বিয়ের পরপরই মোবাইলে ভলিউম বইয়ের ছবি তুলেছিলেন।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৪ লাখ টাকার নিকাহনামায় সংখ্যাগুলো ঘষামাজা করা হয়েছে এবং লেখায় অসামঞ্জস্যতা আছে।
পরবর্তীতে গত ১৮ আগস্ট জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সিনিয়র সহকারী জজ আদেশে উল্লেখ করেন, ৪ লাখ টাকার নিকাহনামাটি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি হয়েছে বলে প্রমাণ মেলে। কাজী মো. আব্দুল মজিদ ও লতিফা খাতুনের মধ্যে যৌথ যোগসাজশ থাকতে পারে।
এর ফলে বাদী আনারুল ইসলামকে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া দেনমোহরের পরিমাণ নিয়ে ভিন্নতার কারণে আপোষ-মীমাংসা ব্যর্থ হয় এবং নথিটি সংরক্ষণ করা হয়।