সিরাজ প্রামাণিক : বোনকে বাবার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করলে কিন্তু জেল-জরিমানার বিধানও রয়েছে। তবে বিবাহিতা বোনেরা শুধু বাবার ভিটাবাড়ির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। অন্য জমি থেকে তার অংশ বুঝিয়ে দিতে হবে।
মুসলিম পারিবারিক আইনে বাবা বা মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই থাকে, তাহলে রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে প্রত্যেক ছেলে যা পাবে, মেয়ে তার অর্ধেক পাবে। অর্থাৎ বাবা বা মায়ের সম্পত্তি ২:১ অনুপাতে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ভাগ হবে।
অনেক সময় ভাইয়েরা বোনদেরকে বঞ্চিত করে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়ে জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করে থাকেন। তাতে কিন্তু ভাইদের বেশী লাভ হয় না। বোনেরা জানতে পেরে ভাইদের নামে ভুয়াভাবে হওয়া রেকর্ড সংশোধনের জন্য এ্যাসিল্যান্ডের কাছে প্রমাণসহ আবেদন করলে এ্যাসিল্যান্ড মহোদয় তদন্ত করে তা সংশোধন করে দিতে পারেন। আবার এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যদি নামের ব্যতিক্রম থাকে বা ভুল থাকে এমন ক্ষেত্রে করণিক ভুল সংশোধন করে দিতে পারেন এ্যাসিল্যান্ড। ২৯শে জুলাই ২০২১ সালে এ বিষয়ে একটি পরিপত্রও রয়েছে। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।
একজন নারী বিবাহ পর্যন্ত পৈত্রিক ভিটার সহ-অংশীদার হিসেবে বিবেচ্য হবেন। কিন্তু বিবাহের পর স্বামীর বাড়িতে বসবাসকালে তিনি বাইরের মানুষ হিসেবে বিবেচিত হবেন। সেকারণ বোনেরা পৈত্রিক ভিটায় অবস্থিত বসতগৃহ বা কুটিরের কোন একচ্ছত্র অংশ দাবী করতে পারেন না। কাজেই বাটোয়ারা মামলায় স্বামী গৃহে বসবাসরত বিবাহিত কন্যা পিতৃগৃহ বা কুটিরের অংশবিশেষ প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচিত হয় না। উক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী (পূত্র সন্তান) গণের মধ্যে বিবাদ বা বিরোধ বৃদ্ধি পাবে বলে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। (১৩ ডি.এল.আর, ২৩০ পৃষ্ঠা)।
আরও পড়ুন : তামাদির মেয়াদ অতিক্রান্তের পর ভূমির রেকর্ড সংশোধন করা যাবে না – এ ধারণা সঠিক নয়
মেয়ের বিবাহ হলে মেয়ে যদি স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে, তাহলে বাটোয়ারা আইনের ৪ ধারা মতে পৈত্রিক বাড়ি বাটোয়ারা করতে পারবে না। কারণ, সে একই পরিবারভূক্ত নয়। (৩৪ ডিএলআর ২৪৫ পৃষ্ঠা)। মনে রাখবেন মুসলিম আইনে বাবা বা মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই থাকে তাহলে রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ছেলেরা যা পাবেন, মেয়ে বা মেয়েরা তার অর্ধেক পাবেন। অর্থাৎ ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হোক বা না হোক, সেটি বিবেচ্য নয়।
সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত বোনেরা বাঁটোয়ারা বা বণ্টনের মোকদ্দমা করতে পারেন। তবে বিবেচিত বিষয় হচ্ছে এই যে, যেহেতু মেয়েদের ঠিকানা হয় শশুর বাড়ি তাই বাপের বাড়ির গৃহের অংশ তাদের ব্যবহার করার দরকার পড়েনা। এছাড়াও একটা পর্যায় বোনেরা বাপের বাড়ির জমি পেলেই জমি অন্যের কাছে বিক্রি করে চলে যায়। অন্যদিকে ছেলেদের বাপের গৃহই সম্বল। সামাজিক আর পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় পিতৃগৃহের ভিটে বাড়ির জমি ব্যতীত সমপরিমান জমি অন্য জায়গা থেকে দেয়া হয়।
অর্থাৎ বোনের হক যাতে কোনোভাবেই বিনষ্ট না হয় এমন জমি থেকে তার অংশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সেটাও যদি ভাইয়েরা বা ভাইপো’রা বুঝিয়ে দিতে অস্বীকার করে তাহলে রীতিরকম বাটোয়ারা মামলা করে অংশ বুঝিয়ে নেয়া সম্ভব। এ মামলা করতে হলে কিন্তু বোনদের সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। কারণ নালিশী আর্জিতে সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের বিবরণ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করতে হয়।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও পিএইচ. ডি ফেলো। ই-মেইল: seraj.pramanik@gmail.com