আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্যে শাহবাগ আন্দোলন ও ফ্যাসিবাদের চিত্র

সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের পর বিরোধী প্রতিপক্ষকে দমনই ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান লক্ষ্য। শুরুতেই টার্গেট করা হয় ইসলামপন্থী দলগুলোকে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শাহবাগে গড়ে তোলা হয় গণজাগরণ মঞ্চ, যার মাধ্যমে দেশে “মব কালচার” প্রতিষ্ঠিত হয়।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ৪৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিতে গিয়ে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এ তথ্য তুলে ধরেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, শাহবাগে প্রতিষ্ঠিত গণজাগরণ মঞ্চ বিচারের দাবির পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আন্দোলন চালায়। সরকারের সহযোগিতায় সেখানে বিক্ষোভ হয় এবং রাষ্ট্রযন্ত্র বিক্ষোভকারীদের নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে। সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ফাঁসির দাবিতে দাঁড়িয়ে সমর্থন জানাতে বাধ্য করা হয়, এমনকি সংসদে দাঁড়িয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহবাগী উদ্যোক্তাদের মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করেন।

আরও পড়ুন : যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ কমানোর চিন্তা করছে সরকার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের ফ্যাসিস্ট সরকারগুলো যেমন গণশত্রু তৈরি করে জনগণকে উন্মাদনায় ঠেলে দেয়, বাংলাদেশেও শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে একই চিত্র দেখা গেছে। এ সময় ভারতের পূর্ণ সমর্থনও ছিল আন্দোলনে। প্রমাণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন, প্রটোকল না আটকালে তিনিও শাহবাগে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করতেন।

মাহমুদুর রহমানের মতে, শাহবাগ আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের ইসলামবিদ্বেষী চেহারা প্রকাশিত হলে হেফাজতে ইসলামের উত্থান ঘটে। ফাঁসির দাবির পাশাপাশি ভিন্নমতের মালিকানাধীন গণমাধ্যম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিও তোলে তারা, যা পুরো আন্দোলনকে ফ্যাসিবাদী চরিত্রে রূপ দেয়। তার ভাষায়, “ন্যায়বিচার নয়, বরং প্রতিহিংসা ও দমননীতির দিকেই মোড় নেয় পুরো প্রক্রিয়া।”

তিনি আরও জানান, আমার দেশ পত্রিকা দেশবাসীকে সতর্ক করতে তখন “শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এদিন বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে সাক্ষ্য গ্রহণ। পরে এক ঘণ্টার বিরতি দেওয়া হয়।

এদিকে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অল্প কিছু সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পরেই কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।