ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর — বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রিফাত আহমেদ বর্তমানে ব্রাজিলে অবস্থান করছেন। তিনি National High Court of Brazil [Superior Tribunal de Justiça (STJ)] এর প্রধান বিচারপতি Antonio Herman Benjamin এর আমন্ত্রণে “Exchanges on Matters of Mutual Judicial Interest, Particularly Concerning Institutional Reform, Environmental Justice, Judicial Independence, and Technological Innovation in the Administration of Justice” শীর্ষক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
সফরের অংশ হিসেবে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রধান বিচারপতি সারাদিনব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমে যোগ দেন। তিনি ব্রাজিলের রাজধানী Brasília–তে অবস্থিত National High Court of Brazil (STJ) পরিদর্শন করেন এবং আদালতের প্রধান বিচারপতি Antonio Herman Benjamin এর সাথে বৈঠক করেন। উল্লেখ্য, ব্রাজিলের সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে STJ দেশটির সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে ফেডারেল আইনসমূহ প্রয়োগ করে।
বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু
বৈঠকে উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
মাননীয় বিচারপতিরা একমত হন যে, একবিংশ শতাব্দীতে যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাণিজ্য, যোগাযোগ ও মানুষের চলাচল ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করছে, তখন বিচার বিভাগীয় আন্তঃসম্পর্ক আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা ন্যায়বিচারকে একটি সার্বজনীন অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হবে।
প্রযুক্তি বিনিময় ও ডিজিটালাইজেশন
আলোচনায় বিচার প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তি বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়। ব্রাজিল প্রতিশ্রুতি দেয় যে, বাংলাদেশকে বিচার বিভাগের ডিজিটাল রূপান্তরে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। বিশেষ করে ই-ফাইলিং, ডিজিটাল কেস ম্যানেজমেন্ট, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং অনলাইন বিরোধ নিষ্পত্তি চালুর ক্ষেত্রে ব্রাজিলের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিচার ব্যবস্থায় AI এর ভূমিকা
উভয় বিচারপতি বিচার প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁরা উল্লেখ করেন, AI চালিত কেস ম্যানেজমেন্ট, দ্রুত ও নির্ভুল নজির অনুসন্ধান, আইন বিশ্লেষণ ইত্যাদি ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত হবে।
অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা
ব্রাজিলে প্রচলিত Judicial Ombudsman ব্যবস্থার আলোকে বাংলাদেশেও গণকেন্দ্রিক ‘অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা’ (grievance redressal mechanism) চালুর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। ব্রাজিলে ২০০৪ সালের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আদালত ও পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসে বিচার সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশেও অনুরূপ ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ়
উল্লেখ্য, এর আগে ৩ মার্চ ২০২৫ তারিখে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আয়োজিত “Upholding Environmental Justice: The Role of Judges for a Sustainable Future” শীর্ষক সেমিনারে ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ সফর দুই দেশের বিচার বিভাগের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করছে।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ব্রাজিলে অবস্থান করবেন এবং বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা জোরদারে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।