গ্রাম আদালত (প্রতীকী ছবি)
গ্রাম আদালত (প্রতীকী ছবি)

অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করছে দেশের ৬১ জেলায় গ্রাম আদালত

দেশের ৬১ জেলায় গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চলমান। এই আদালতে মাত্র ১০ টাকা ফি দিয়ে ফৌজদারি মামলা এবং ২০ টাকা ফি দিয়ে দেওয়ানী মামলার আবেদন করা যায়। আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও গড়ে ২৮ দিনে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণ বিশেষ করে নারী, প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খুব সহজেই গ্রাম আদালতে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া, দুটি পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করা হয়। তবে, অনেক মানুষ গ্রাম আদালত সম্পর্কে অবহিত না থাকার কারণে ছোটখাটো বিরোধ নিয়ে থানায় ও আদালতে মামলা দায়ের করছে। আইনজীবীদের মতে, গ্রাম আদালত ব্যবস্থা আরও কার্যকর হলে আদালতের ওপর চাপ কমবে, মানুষ দ্রুত এবং সহজে বিচার পাবে, এবং মামলার জটও কমবে।

গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ-৩য় পর্যায় প্রকল্প স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি উদ্যোগ। এটি বাংলাদেশ সরকার, ইউএনডিপি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পের লক্ষ্য হলো কার্যকরী স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া হিসেবে সারা দেশে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।

এ বিষয়ে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ-৩য় পর্যায় প্রকল্পের লিগ্যাল অ্যানালিস্ট মশিউর রহমান চৌধুরী বলেন, দেশের ৬১টি জেলায় গ্রাম আদালত কার্যকর রয়েছে। তিনি জানান, মানুষ গ্রাম আদালত সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় এ আদালতে দায়েরযোগ্য মামলা থানায় ও আদালতে দায়ের করছে। তিনি আরো বলেন, আইনে ৯০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও, গড়ে ২৮ দিনে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে।

গ্রাম আদালতের মূল উদ্দেশ্য হলো বিরোধ নিষ্পত্তি করা, দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়া এবং সমস্যার দ্রুত সমাধান। নিজ ইউনিয়নে বসে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় থানা বা আদালতে যাতায়াতের খরচ ও সময় বাঁচে।

গ্রাম আদালতের বৈশিষ্ট্য

  • স্থানীয় পর্যায়ে ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তি।

  • ৩ লাখ টাকার কম মূল্যমানের মামলা নিষ্পত্তি।

  • আইনজীবী নিয়োগের বাধ্যবাধকতা নেই।

আবেদন প্রক্রিয়া

  • ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে।

  • আবেদনপত্র চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করতে হবে।

  • ফৌজদারি মামলার ফি ১০ টাকা, দেওয়ানি মামলার ফি ২০ টাকা।

  • ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে বিরোধ সংঘটিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

  • দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে ৬০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

  • স্থাবর সম্পত্তি বেদখল হলে ১ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করা যাবে।

গ্রাম আদালতের সুবিধা

  • অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে বিচার।

  • মামলা নিষ্পত্তিতে আইনজীবীর প্রয়োজন নেই।

  • সমঝোতার ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি।

  • দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণ, নারী, প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য সহজ প্রবেশাধিকার।

বিরোধ নিষ্পত্তি

  • ফৌজদারি: চুরি, দাঙ্গা, প্রতারণা, ঝগড়া, কলহ বা মারামারি, মূল্যবান সম্পত্তি আত্মসাৎ, অন্যায় নিয়ন্ত্রণ বা আটক, ভয়ভীতি বা হুমকি, নারীর শালীনতা বা মর্যাদা লঙ্ঘন।

  • দেওয়ানি: পাওনা টাকা আদায়, স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা ক্ষতিপূরণ, গবাদিপশুর অনধিকার প্রবেশের কারণে ক্ষতিপূরণ, কৃষি শ্রমিকদের মজুরি ও ক্ষতিপূরণ, স্ত্রী কর্তৃক বকেয়া ভরণপোষণ।

যেসব মামলা গ্রাম আদালত করতে পারবে না

  • ধর্ষণ, খুন, অপহরণ, ডাকাতি, বহুবিবাহ, তালাক, অভিভাবকত্ব, দেনমোহর, দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতন, রক্তপাত সম্পর্কিত ঘটনা, স্থাবর সম্পত্তি ৩ লাখ টাকার বেশি মূল্যমান।

গ্রাম আদালত গঠন

  • একজন চেয়ারম্যান ও দুইজন করে পার্টজন সদস্য।

  • চেয়ারম্যান অনুপস্থিত হলে প্যানেল চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

  • নারী সংশ্লিষ্ট মামলায় প্যানেল সদস্য হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক।

জরিমানা ক্ষমতা

  • মিথ্যা মামলা দায়ের: সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।

  • সাক্ষী সমন অমান্য: সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা।

  • আদালত অবমাননা: সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা।

গ্রাম আদালত অবমাননার উদাহরণ

  • অশালীন কথা বলা বা হুমকি।

  • কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি।

  • আদালতের আদেশ অমান্য।

  • দলিল বা অর্পণ বা হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হওয়া।

  • আদালতের প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করা।