সিরাজ প্রামাণিক : জমি কিনেছেন দাগে দাগে কিন্তু নামজারি করেছেন একদাগে আবার ভোগদখলও করেেছন এক দাগেও তাহলে এ দলিল বা নামজারি ভবিষ্যতে টিকবে কি-না? আপনি একদাগেই ভোগদখল থাকতে পারবেন কি-না? এসব নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত ও জিজ্ঞাসা রয়েছে।
মনে রাখবেন দাগে দাগে জমি কিনলে নামজারিও অবশ্যই দাগে দাগে করতে হবে। এক দাগে একত্রে নামজারি করা আইনগতভাবে বৈধ নয় এবং তা ভবিষ্যতে তা বাতিল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দলিলে যদি উল্লেখ থাকে একটি দাগ থেকে ৫ শতাংশ, অন্য দাগ থেকে ৩ শতাংশ এবং আরেকটি দাগ থেকে ২ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়েছে, তবে ক্রেতা বাস্তবে যেখানেই ভোগদখল করুন না কেন, নামজারি অবশ্যই প্রতিটি দাগ অনুযায়ী করতে হবে। এক দাগে সব অংশ একত্রে নামজারি করা হলে সেটা হবে অবৈধ এবং আদালতের বিচারে তা অবৈধ ঘোষিত হতে পারে।
কাজেই সহশরিক বা বঞ্চিত ওয়ারিশরা ভবিষ্যতে মোবদ্দমা করলে আদালত যাচাই করে সহজেই বুঝতে পারবে যে বিক্রেতার অংশ সীমিত ছিল, অথচ দলিলে বেশি জমি দেখানো হয়েছে। এই অবস্থায় শুধু নামজারি নয়, দলিলও বাতিল হতে পারে। ফলে এ সমস্যার আইনগত সমাধান হচ্ছে দাগে দাগে নামজারি করাই একমাত্র বৈধ পথ। যদি বাস্তবে এক দাগে জমি ব্যবহার করতে চান, তবে সহশরিকদের সঙ্গে এওয়াজ বদল (বিনিময় দলিল) করে বৈধভাবে রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। অন্যথায় যেই অংশে বিক্রেতার সম্পত্তি ছিল না, সেই অংশে দখল রাখা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে এবং বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন : জমি আপনার, দখল অন্যের, কী করবেন?
আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন কারও শরিকানা সম্পত্তি কেনার আগে জমির সব কাগজপত্র, ওয়ারিশান সনদ ও দলিল ভালোভাবে যাচাই না করলে ক্রেতা হিসেবে আজীবনের কষ্টের টাকা দিয়ে “মামলা-মোকদ্দমা ক্রয়” করার ঝুঁকিতে পড়বেন।
কাজেই এখন থেকে যদি ওয়ারিশরা পারস্পরিক সম্মতিতে “আপোষ বণ্টননামা” দলিল করে থাকেন, তাহলে যে যার অংশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটি দাগ থেকেই নামজারি করতে পারবেন। অর্থাৎ, কারও ভাগে যদি ১০ শতাংশ জমি পড়ে এবং তা যদি একটি নির্দিষ্ট দাগে নির্ধারিত হয়, তাহলে তিনি সেই এক দাগ থেকেই সম্পত্তির মালিক হিসেবে নামজারি করতে পারবেন এবং বিক্রি-হস্তান্তরসহ সব ধরনের আইনি কার্যক্রম চালাতে পারবেন।
শরিকানা সম্পত্তি বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলছি যদি আপনি জমা ভাগ না করে শুধুই ওয়ারিশ সনদের মাধ্যমে নামজারি করেন, তবে দাগে দাগেই মালিকানা হবে এবং আপনি সেই দাগ অনুযায়ীই বিক্রি করতে পারবেন। তবে আপোষ বণ্টননামা দলিল করে যদি আপনি নির্দিষ্ট একটি দাগ থেকে সম্পত্তি নেন, তাহলে আপনি শুধুই সেই দাগের মালিক হবেন এবং সম্পূর্ণ আইনগত অধিকার পাবেন এবং বিক্রি করতে পারবেন।
সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে স্পষ্ট বলা হয়েছে আপোষ বণ্টননামা দলিল ছাড়া এক দাগ থেকে অংশবিশেষ বিক্রি করলে তা বৈধ হবে না। তাই আইনি সুরক্ষার জন্য আপোষ করে বন্টন দলিল রেজিস্ট্রি করা আবশ্যক।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইনগবেষক। ইমেইল: seraj.pramanik@gmail.com