পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির চার সদস্যের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ দেলোয়ার হোসেন রাসেল (সদস্য নং-২৫৯) সহকর্মী চারজন অ্যাডভোকেটের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ এনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কাছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছেন।
চলতি বছরের গত ১০ আগস্ট বার কাউন্সিলে করা আবেদনের অনুলিপি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের হাতে এসেছে। আবেদনের ভাষ্যমতে, ঘটনাটি ঘটেছে চলতি বছরের গত ৮ জুলাই সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে পঞ্চগড় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে, বিচারক নুরুজ্জামানের দৈনন্দিন বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগ মুহূর্তে।
আবেদনে বলা হয়েছে, ওই সময় অ্যাডভোকেট মোঃ হাবিবুল ইসলাম হাবিব (সদস্য নং-৫৭)-এর নেতৃত্বে অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল হান্নান বাবুল (সদস্য নং-৬৩) রাসেলের বাম গালে সজোরে চড় মারেন। পরে অ্যাডভোকেট হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অ্যাডভোকেট মোঃ সনেট হোসেন (সদস্য নং-১২৯) এবং অ্যাডভোকেট মোঃ আল আমিন (সদস্য নং-২৪২) তাঁর ওপর চড়াও হয়ে কিল-ঘুষি মারার চেষ্টা করেন। এসময় শিক্ষানবিস আইনজীবী রাজু কামাল তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। রাজু কামাল ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম সাক্ষী।
এরপরও অভিযুক্ত চার আইনজীবী পুনরায় তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। এসময় আদালতের বিভিন্ন জিআরও কর্মকর্তা—আমলী আদালত-১ এর কাবুল সাহেব, আমলী আদালত-৪ এর শাহিন সাহেব, আমলী আদালত-৫ এর নব কুমার, সদর সিএসআই ইসমাইল সাহেবসহ অনেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী, পিয়নসহ আরও আইনজীবী ও প্রায় ৭০-৮০ জন মোয়াক্কেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন : ১১ দিনের শিশুসহ মা কারাগারে
অভিযোগে বলা হয়েছে, এভাবে প্রকাশ্যে অপেশাদারসুলভ আচরণে তিনি Tertiary Victimization এর শিকার হয়েছেন, যা আইনজীবী মহল, আদালত প্রাঙ্গণ ও সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ঘটনার কারণ হিসেবে অভিযুক্তরা অভিযোগ করেন, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন রাসেল জি.আর-২৭২/২৫(P) মামলায় আসামি পক্ষে পেশ করেছেন, অথচ সেই মামলার বাদী ছিলেন অ্যাডভোকেট সনেট হোসেন। অভিযুক্তরা দাবি করেন, কোনো মামলার বাদী যদি আইনজীবী হন তবে আসামি পক্ষে অন্য আইনজীবী পাওয়ার নিতে পারবেন না। তবে রাসেল প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আইনে এ ধরনের কোনো বিধান নেই।
পরে তাঁকে ওকালতনামা ও জামিনের দরখাস্ত প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে নথিপত্র তাঁর কাছে সংরক্ষিত আছে।
অ্যাডভোকেট দেলোয়ার অভিযোগ করেছেন, এ ধরনের আচরণ Canons of Professional Conduct and Etiquette-এর চ্যাপ্টার-১ ক্যানন-১ এবং চ্যাপ্টার-২ ক্যানন-১২ অনুযায়ী পেশাগত অসদাচরণের অন্তর্ভুক্ত।
তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২-এর ৩২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ৩৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা জজ কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং অভিযোগকারীর ছোট ভাই মো. আবুল কালাম আজাদ ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, গত ১০ আগস্ট আমার বড় ভাই বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ইতোমধ্যে অভিযুক্তরা আমাদেরকে ক্রমাগত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, ফলে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছি।
তিনি আরো বলেন, আমি আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, বিষয়টি তদন্ত করে আমাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক। আইনজীবীদের অভিভাবক হিসেবে আমি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে আমাদের অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।