কলকাতা হাইকোর্ট
কলকাতা হাইকোর্ট

স্বামী বেকার হলেও স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে হবে: কলকাতা হাইকোর্ট

কলকাতা, সেপ্টেম্বর ২০২৫ – স্বামী কর্মক্ষম হলে বেকারত্ব বা আর্থিক দুরবস্থার অজুহাতে স্ত্রীকে ভরণপোষণ না দেওয়ার সুযোগ নেই। সম্প্রতি এক রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট এ কথা স্পষ্ট করেছেন। আদালত বলেন, স্ত্রীকে তাঁর মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে জীবনযাপনের সুযোগ দিতে হবে, তাঁকে কোনোভাবেই অনাহারে-অর্ধাহারে ফেলে রাখা যাবে না।

রিঙ্কি চক্রবর্তী নামে এক নারী ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারায় ভরণপোষণের আবেদন করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং স্ত্রীধন থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রথমে ফ্যামিলি কোর্ট তাঁকে মাসিক ৪ হাজার টাকা অন্তর্বর্তীকালীন ভরণপোষণ মঞ্জুর করে, যা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টও বহাল রাখে। কিন্তু মামলার মূল শুনানিতে স্বামী দাবি করেন, স্ত্রী চাকরিজীবী এবং বেতন পান, অন্যদিকে তিনি চাকরি হারিয়ে বেকার। সেই যুক্তি মেনে ফ্যামিলি কোর্ট আবেদন খারিজ করে দেয়।

এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে আসেন স্ত্রী। মামলার শুনানিতে বিচারপতি অজয় কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, আইন অনুযায়ী স্ত্রী যদি ভরণপোষণের যোগ্য হন, তবে তা অবশ্যই তাঁকে দিতে হবে, যাতে তিনি সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারেন। স্বামী নিজের কর্মহীনতার অজুহাত দিয়ে দায় এড়াতে পারেন না, যতক্ষণ তিনি শারীরিকভাবে সক্ষম এবং আয় করার ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন : বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করল সুপ্রীম কোর্ট

আদালত পর্যবেক্ষণ করেন, ভরণপোষণ মামলা কেবল আর্থিক সহায়তার বিষয় নয়, এটি সামাজিক ন্যায়বিচারের একটি উপায়। সংবিধানের ১৫(৩) ও ৩৯ অনুচ্ছেদের আলোকে স্ত্রীকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য। বিচারপতি আরও জানান, স্ত্রী মাসে ১২ হাজার টাকা আয় করলেও তা স্বামীর তুলনায় উচ্চতর আর্থসামাজিক অবস্থানে টিকে থাকার নিশ্চয়তা দেয় না। স্বামী নিজেই স্বীকার করেছেন যে তাঁর পারিবারিক অবস্থা স্ত্রীর তুলনায় উন্নত। ফলে স্ত্রীর উপার্জনকে ভরণপোষণ প্রত্যাখ্যানের ভিত্তি করা যায় না।

রায়ে আরও বলা হয়, স্বামী নিজের দোষে চাকরি হারালেও ইচ্ছাকৃতভাবে বেকার থাকতে পারেন না। তিনি কর্মক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিলে সেটি ‘সক্ষম না থাকা’র অজুহাত হিসেবে গণ্য হবে না। তাই ফ্যামিলি কোর্টের যুক্তি আইনসম্মত নয় এবং তা টিকতে পারে না।

অবশেষে হাইকোর্ট ফ্যামিলি কোর্টের আদেশ বাতিল করে স্বামীকে মাসিক ৪ হাজার টাকা ভরণপোষণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। আবেদন দায়েরের তারিখ থেকেই এ ভরণপোষণ কার্যকর হবে। বকেয়া টাকা ১২ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে, অন্যথায় স্ত্রী আইনি পথে আদায় করতে পারবেন।