মিথ্যা ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক, উপজেলা সংবাদদাতা ও আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট ও সিলেট জজ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শামীম আহমদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং: শাহপরান (রহ.) সি.আর-৪৭/২০২৫।
বাদীর অভিযোগ, গত ২৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ৯ নম্বর পৃষ্ঠার ৫ নম্বর কলামে “কোটি টাকার খাস জমি আত্মসাতের চেষ্টা: বিশ্বনাথে উত্তেজনা” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের মাধ্যমে বাদীর পারিবারিক মৌরসি সম্পত্তিকে সরকারের খাস জমি হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং তাকে জোরপূর্বক জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া সংবাদে দাবি করা হয়, বাদীর চাচা চাঁন মিয়া ও তার ভাতিজারা একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রামবাসীকে হয়রানি করেছেন।
কিন্তু বাদীর বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁর চাচা চাঁন মিয়া ২০২৪ সালের অক্টোবরে মারা যান এবং জীবদ্দশায় কারও বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা করেননি। বাদী নিজেও কখনো এ ধরনের মামলা করেননি। ফলে সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ৯ নম্বর পৃষ্ঠার ৫ নম্বর কলামে “কোটি টাকার খাস জমি আত্মসাতের চেষ্টা: বিশ্বনাথে উত্তেজনা” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে বাদীর পারিবারিক সম্পত্তিকে খাস জমি বলে উল্লেখ করা হয় এবং তাকে জোরপূর্বক দখল চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। বাদীর দাবি, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং মানহানিকর সংবাদ।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহমেদ নকিব জানান, সংবাদে প্রকাশিত ছবির সাইনবোর্ড ও জমি আসলে বাদীর পারিবারিক সম্পত্তি, যা এসএ খতিয়ান নং-০৩ ও বিএস খতিয়ান নং-২৯৪ অনুযায়ী তাঁর পিতামহ আয়াতউল্লাহর নামে রেকর্ডভুক্ত।
তিনি জানান, ১৯৮৩ সালে সিলেটের দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে স্বত্ব মোকদ্দমা (মোকদ্দমা নং ২৩৭/১৯৮২) নিষ্পত্তি হয় এবং ওই রায় অনুযায়ী বাদীর পিতামহ আয়াতউল্লাহর স্বত্ব বহাল থাকে। সেই রায় ও ডিক্রির ভিত্তিতেই আজও জমি তাঁর উত্তরসূরিদের ভোগদখলে রয়েছে।
আসামিদের তালিকা
মামলায় মোট ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে:
১. এম.এ. বাহাউদ্দিন, সম্পাদক, দৈনিক ইনকিলাব
২. আব্দুস সালাম, উপজেলা সংবাদদাতা, বিশ্বনাথ (সিলেট)
৩. নুরুল হক (৫৫), পিতা মৃত জাবিদ আলী
৪. আঙ্গুর মিয়া (৫৭), পিতা মৃত তজম্মুল আলী
৫. মাছুম আহমদ (৩৪), পিতা মুজিবুর রহমান
৬. তোফায়েল আহমদ (২৫), পিতা মুজিবুর রহমান
৭. আবু শহীদ কামরান (২২), পিতা নুরুল হক
বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী, আবু শহীদ কামরান নিজের ফেসবুক আইডি থেকে মানহানিকর সংবাদটি পোস্ট করেন এবং মাছুম আহমদ ও তোফায়েল আহমদ তা শেয়ার করে আরও ছড়িয়ে দেন।
ধারা ও অভিযোগ
মামলাটি দণ্ডবিধির ধারা ৫০০, ৫০১, ৫০২, ১২০(বি), ৩৪ ও ১১৪ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। বাদী দাবি করেছেন, আসামিরা প্রকৃত সত্য জানার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পেশাগত মানহানি করেছেন। এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি ৫০ কোটি টাকা দাবি করেছেন।
সাক্ষীদের নাম
বাদীর পক্ষে তিনজন সাক্ষী আদালতে নাম উল্লেখ করেছেন:
-
সাজ্জাদুর রহমান
-
জিহান আহমদ
-
জুবায়ের আহমদ
অ্যাডভোকেট শামীম আহমদ বলেন, “সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। কিন্তু এর নামে হলুদ সাংবাদিকতা করে যদি কারও সম্মানহানি করা হয়, তাহলে আদালতের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আমার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পরিকল্পিত। আমি আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার চাই।”