বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবস্থা জাতিসংঘে উত্থাপন করলো জেএমবিএফ

বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবস্থা জাতিসংঘে উত্থাপন করলো জেএমবিএফ

ফ্রান্সভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন জাস্টিসমেকারস বাংলাদেশ (জেএমবিএফ)-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম বাংলাদেশের অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি জেনেভায় জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে উত্থাপন করেছেন।

তিনি জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR) এবং জাতিসংঘের বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদকের কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

গত ২ অক্টোবর জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের প্রধান মি. ররি মুনগোভেনের সঙ্গে বৈঠকে ইসলাম জেএমবিএফ-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, যেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচনের বিষয় তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে তিনি উল্লেখ করেন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়েছে, যা আইনজীবীদের ওপর বিস্তৃত দমন-পীড়নের অংশ।

অ্যাডভোকেট ইসলাম অভিযোগ করেন যে সরকার মিথ্যা ও সাজানো মামলার মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করছে। তিনি বিশেষভাবে সাংবাদিক ফারজানা রূপার কথা উল্লেখ করেন, যিনি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মিথ্যা হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দায়ের এবং সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুন : বার বার আমিন দিয়ে জমি মেপে হয়রান, করণীয় কী?

প্রত্যুত্তরে মুনগোভেন জানান, জাতিসংঘ সংস্কার উদ্যোগে অন্তর্বর্তী সরকারকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারা, বিশেষ করে সাজানো মামলা, এখনও অব্যাহত রয়েছে।

তিনি শাহানুর ইসলামকে আশ্বস্ত করেন যে তার উত্থাপিত উদ্বেগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

বৈঠকে অ্যাডভোকেট ইসলাম জেএমবিএফ-এর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন—বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর বার্ষিক প্রতিবেদন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যুর সারসংক্ষেপ, এবং আইনজীবীদের ওপর দমন অভিযানের একটি অপ্রকাশিত পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ—হস্তান্তর করেন। বৈঠকে জেএমবিএফ-এর সদস্য মো. শফিক আহমদ এবং OHCHR কর্মকর্তা লিভিয়া কসেনজা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন : জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় ইন্টার্নশিপের সুযোগ

তাছাড়া সকালে অ্যাডভোকেট ইসলাম জাতিসংঘ দপ্তরে বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদকের কার্যালয়ের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেলানি সান্তিজো সান্দোভাল।

বৈঠকে অ্যাডভোকেট ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে “পদ্ধতিগত হয়রানি, ইচ্ছাকৃত গ্রেপ্তার এবং সাজানো মামলা” চলছে। বিশেষ প্রতিবেদকের কার্যালয় এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

আলোচনার পর ইসলাম বলেন, “এই বৈঠকগুলো অত্যন্ত জরুরি ছিল, যাতে বাংলাদেশের ভুক্তভোগীদের কণ্ঠ আন্তর্জাতিক পরিসরে উপেক্ষিত না হয়। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে প্রমাণ উপস্থাপন করতে থাকব, যতদিন না জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।”

জেনেভায় অনুষ্ঠিত এই ধারাবাহিক বৈঠক জেএমবিএফ-এর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা তুলে ধরে, যেখানে সংগঠনটি আইনজীবী, সাংবাদিক এবং নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় জাতিসংঘকে অন্তর্বর্তী সরকারের মুখোমুখি করতে কাজ করে যাচ্ছে।