অ্যাডভোকেট শামস আর্ক : বাংলাদেশের বিচারবিভাগ নিয়ে আলোচনায় আমরা প্রায়ই শুনি — আলাদা সচিবালয়, বাজেটের স্বায়ত্তশাসন, বাক্মিশনের ক্ষমতাবৃদ্ধির কথা। এসব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এগুলো কেবল কাঠামোগত স্বাধীনতা এনে দিতে পারে; আত্মিক স্বাধীনতা নয়।
সত্যি কথা বলতে, বিচারবিভাগ প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হবে সেই দিনই, যেদিন বিচারকগণ নিজেদের একজন ‘সরকারি চাকুরিজীবী’ হিসেবে ভাবা ত্যাগ করবেন। যতদিন বিচারকের মানসিকতা থাকবে ‘আমি সরকারের অংশ’ বা ‘সরকারের বেতনভোগী কর্মকর্তা’, ততদিন তিনি অজান্তেই নির্বাহী প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারবেন না।
বিচারকের ভূমিকা প্রশাসনের কর্মচারীর মতো নয়। তিনি রাষ্ট্রের এক অবিচ্ছেদ্য সাংবিধানিক স্তম্ভ — যিনি অন্য দুই বিভাগ (নির্বাহী ও আইনসভা)-এর কর্মকাণ্ডের ওপর ন্যায়ের মানদণ্ড প্রয়োগ করেন। কিন্তু যখন এই মানদণ্ডের রক্ষক নিজেই নির্বাহী মানসিকতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, তখন বিচারবিভাগের স্বাধীনতা কেবল নথিপত্রে সীমাবদ্ধ থাকে।
একজন “একনিষ্ঠ সরকারি চাকুরিজীবী” যখন বিচারকের আসনে বসেন, তখন তিনি হয়ে ওঠেন executive-minded civil servant in the guise of a judicial officer — একজন প্রশাসনিক মানসিকতার কর্মকর্তা, যিনি ন্যায়ের চেয়ে কর্তৃত্ব কিংবা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বেশি অনুগত।
বিচারবিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা তাই কোনো আইন বা অধ্যাদেশের ধারায় নয়, জন্ম নেবে বিচারকদের চেতনায় — যেদিন তাঁরা নিজের পরিচয় খুঁজবেন ‘ন্যায়বিচারের রক্ষক’ হিসেবে, সরকারের কর্মচারী হিসেবে নয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ আইন কর্মকর্তা (ইনচার্জ); দৈনিক প্রথম আলো