২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় করা মামলার আপিল বিভাগের শুনানি চার সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
ঘটনাপ্রবাহ
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর, ৩০ এপ্রিল, শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন— ১. নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, ২. তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, ৩. তাজুল ইসলাম, ৪. লিটন, ৫. নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, ৬. আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার, এবং ৭. তার গাড়িচালক ইব্রাহিম।
এই নৃশংস ঘটনায় দুটি মামলা হয়—
-
নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা,
-
আর আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
বিচারিক আদালতের রায়
দুটি মামলা একত্রে বিচার করে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন ৩৫ আসামির মধ্যে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন:
-
নূর হোসেন, নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর,
-
র্যাব-১১’র তিন বরখাস্ত কর্মকর্তা—সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, এবং লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা।
হাইকোর্টে শুনানি ও রায়
আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। বিজি প্রেস পেপারবুক প্রস্তুত করে ২০১৭ সালের ৭ মে হাইকোর্টে পাঠায়।
২০১৭ সালের ২২ মে থেকে শুনানি শুরু হয়ে ৩৩ কার্যদিবস চলে। একই বছরের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন, যেখানে বিচারিক আদালতের রায় আংশিক পরিবর্তন করা হয়।
হাইকোর্ট ২৬ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে এবং বাকি ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা:
১. নূর হোসেন, ২. লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, ৩. মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, ৪. লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা, ৫. হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ৬. ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, ৭. এ বি মো. আরিফ হোসেন (আরওজি-১), ৮. ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, ৯. সিপাহী আবু তৈয়্যব আলী, ১০. কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, ১১. এসআই পূর্ণেন্দু বালা, ১২. সৈনিক আবদুল আলীম, ১৩. সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, ১৪. সৈনিক আলামিন শরীফ এবং ১৫. সৈনিক তাজুল ইসলাম।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা:
১. র্যাবের সাবেক সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর, ২. সার্জেন্ট এনামুল কবির, ৩. নূর হোসেনের সহযোগী মূর্তজা জামান চার্চিল, ৪. আলী মোহাম্মদ, ৫. মিজানুর রহমান দিপু, ৬. আবুল বাশার, ৭. রহম আলী, ৮. জামাল উদ্দিন সরদার, ৯. সেলিম (ভারতে গ্রেপ্তার), ১০. সানাউল্লাহ সানা এবং ১১. শাহজাহান।
বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৯ জন
র্যাবের বরখাস্ত কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে—
-
কনস্টেবল হাবিবুর রহমান: ১৭ বছর
-
এএসআই আবুল কালাম আজাদ: ১০ বছর
-
এএসআই কামাল হোসেন: ১০ বছর
-
কনস্টেবল বাবুল হাসান: ১০ বছর
-
কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান: ১০ বছর
-
ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন: ১০ বছর
-
সিপাহী নুরুজ্জামান: ১০ বছর
-
এএসআই বজলুর রহমান: ৭ বছর
-
হাবিলদার নাসির উদ্দিন: ৭ বছর
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করেছে। আপিল বিভাগের আজকের শুনানি চার সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়েছে, ফলে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম আগামী নভেম্বরের শেষের দিকে পুনরায় শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।